শীতের আগমন শুরু হতে না হতেই জামালপুর জেলায় মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকায় খেজুরের রস সংগ্রহে শুরু হয়েছে । ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
এ সব গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে ছয় মাস সংসার চলবে। আগামী ৫ মাসে লক্ষাধিক টাকা বাড়তি আয় হবে বলে আশা গাছিদের।
গাছিরা জানান,শীত মৌসুমের রস সংগ্রহের এই সময়টাতে কাজের চাপে যেন দম ফেলারও সময় নেই । উপজেলায় খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক গ্লাস রস সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু রস বিক্রি করে অনেকটা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে গাছিরা। খেজুর গাছের বুক চিরে সাদা অংশ বের করে একটি পাইপ লাগিয়ে মাটির পাত্র (কলসি) বেঁধে সকাল ও সন্ধ্যায় রস সংগ্রহ করা হয়।
তাদের দাবি, গাছির সংখ্যা কম হওয়ায় অধিকাংশ খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা সম্ভব হবে না। বর্তমান প্রজন্ম কৃষি কাজে আগ্রহী না হওয়ায় কমছে গাছির সংখ্যা। তারপরও আগামী চার মাস খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির অর্থে চলবে তাদের সংসার।
মাদারগঞ্জ উপজেলার ঘুঘুমারী গ্রামের গাছি হাসান আলী বলেন, সাধারণত শীতকালের কার্তিক মাসে রস সংগ্রহের জন্য গাছগুলো প্রস্তুত করতে হয়। একটা গাছের ডাল-পালা কেটে প্রস্তুত করতে কয়েকদিন সময় লাগে।
একই গ্রামের সোলাইমান আলী বলেন, আমাদের গ্রামে অন্তত ১০০ খেজুরের গাছ রয়েছে। গাছি আমরা দুইজন। এই দুইজন মিলে ৪ বছর ধরে এই এলাকায় খেজুরের বস সংগ্রহ করে থাকি। গাছ ও গাছির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদন করে বেশ লাভবান হওয়া যেত।
খেজুরের রস খেতে আসা এক যুবক বলেন, বর্তমান সময়ে সবাই শহরমুখী, পড়াশুনা চাকরি-বাকরি নিয়ে ব্যস্ত। ফলে শীত মৌসুমে নিজেদের খাওয়ার জন্য রস পাওয়া যায় না। অথচ এক সময় আমাদের উপজেলা থেকে এক একটি পরিবার প্রতি হাটে এক ভ্যান করে গুড় বিক্রির জন্য নিয়ে যেত। সরকার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে গাছি তৈরি করতো তাহলে খেজুরের রস ও গুড় গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে শক্তিশালী করতো।
খেজুরের রস সম্পর্কে ডা.আবু রায়হান বলেন , খেজুর রস সুস্বাদু ও উপকারী পানীয়। তবে ঐতিহ্যের ধারক এই খেজুর রসের মাধ্যমে বর্তমানে ‘নিপাহ ভাইরাস’ নামক একটি রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। তবে অন্তত ৭০-৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটিয়ে খেতে পারলে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর আশংকা অনেকাংশে কম থাকে। তাই নিজের কথা চিন্তা করে সবাইকে খেজুর ও তালের রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।
এ দিকে উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহাদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় খেজুরের গাছ ও গাছি কম থাকায় খেজুরের রস অধিক পরিমাণে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি নতুন করে খেজুরের বীজ বপন করা হবে। এর ফলে রস আহরণ ও গুড় তৈরির পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।