রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং-কে দ্রুত অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। রোববার (৮ ডিসেম্বর) নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে রাজশাহী জেলার সকল সম্প্রদায়ের জনগণের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এর মাধ্যমে সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বরজাহান আলী, ক্রীড়া সংগঠক আসাদুজ্জামান আসাদ, আদিবাসী নেতা অনিক টুডু, জয়ন্ত বিশ্বাস, জুই মার্ডী, সুকুমার বিশ্বাস, মাইকেল, শাহাদুর , গোবিন্দ, নরেন হেম্ব্রমসহ আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতারা।
মানবন্ধনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা বলেন, তারা আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি সর্ম্পকে অবহিত এবং সম্প্রতি নতুন পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং সর্ম্পকেও অবগত। তারা বলেন, হরেন্দ্র নাথ সিং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী সদরের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার বিশ্বস্ত কর্মী এবং ওয়ার্কার্স পাটির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী মাওবাদী সংগঠনের সাথে যোগসাজসে বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের নামে আন্দোলন সংগ্রাম করে জাতীয় তথা রাষ্ট্রীয় শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টের অপরাজনীতি করে চলেছে।
এ নিয়ে ২০১০ সালে ডেসটিনি নামে একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘বাংলাদেশি আদিবাসী নেতাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গ’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি করেন কলকাতার শুভ পাল নামের একজন সাংবাদিক। সেখানে উল্লেখ করা হয় ‘বাংলাদেশের এক আদিবাসী রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে এখন বেশ উদ্বেগে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন। আদিবাসী আন্দোলন নিয়ে এই নেতা কিছু দিন যাবৎ খোঁজখবর রাখছেন বলে সে সময়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন।
শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ সরেন নামে এই বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতায় এক স্বনামধন্য লেখিকাসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন বলে সে সময়ে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিলেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সরাসরি না হলেও ঘুরপথে মাওবাদীদের সঙ্গে সরেনের যোগাযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলায় তিনি কয়েকবার গেছেন বলেও তারা জানিয়ে ছিলেন। সন্দেহজনক এই বাংলাদেশি আদিবাসী নেতার গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত্ব গোয়েন্দা রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে সে সময়ে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিলো, রবীন্দ্রনাথ সোরেরে নামে যেন আর ভারতীয় ভিসা মঞ্জুর না করা হয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনের অধীন সমস্ত ভিসা অফিসকে এ বার্তা পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা দফতরের খবর, রবীন্দ্রনাথ সোরেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সক্রিয় সদস্য। পার্টির আদিবাসী ফ্রন্টের নেতাও তিনি।
তারা আরো বলেন এই হরেন্দ্র নাথ সিং প্রয়াত রবীন্দ্রনাথ সরনের একান্ত কাছের মানুষ এবং অনুসারী। এজন্য তার সাথে মাওবাদীদের যোগসাজস রয়েছে। একারণে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণসহ সর্বস্তরের জনগণ বিপদে পড়বে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। বক্তারা আরো বলেন, পতিত ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রবীন্দ্রনাথ সরেন এর উত্তরসূরী এবং ভারতের মাওবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের গুপ্তচর হরেন্দ্র নাথ সিং যদি একাডেমির পরিচালকের পদে নিযুক্ত থাকেন তাহলে আদিবাসীদের মাঝে বিবাদ-বিভাজন বৃদ্ধি পাবে ও আদিবাসী বাঙ্গালীর সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হবে।
এতে করে রাষ্ট্রের সুনামও খুন্ন হবে। সবদিক বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে ভারতের মাওবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের গুপ্তচর হরেন্দ্র নাথ সিংকে একাডেমির পরিচালক পদ থেকে দ্রুত অপসারণ করে একজন প্রকৃত বাংলাদেশী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ব্যক্তিকে অত্র একাডেমির পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জনগণ এবং তাদের সংস্কৃতি রক্ষা করার দাবী জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারিার। দ্রুত তাদের দাবী না মানলে, আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচী দেবেন বলেও হুঁশিয়ারী দেন তারা।