× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পযর্টন রাজধানী জুড়ে ভিক্ষুকের সয়লাব!

অন্তর দে, স্টাফ রিপোর্টার।

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০২ পিএম

ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা

দেশের পযর্টন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে কয়েকগুণ বেড়েছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। কক্সবাজারের বিভিন্ন পযর্টন স্পটে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিনদিন যেন বেড়ে ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সড়ক ও অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণিবিতান, বেশি যানজটের সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদ, বাস টার্মিনাল, এটিএম বুথ, শপিং মলের সামনে হাজার হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন।


এমন চিত্র কক্সবাজার শহরেও দ্বিগুণের বেশি দেখা গেছে। কক্সবাজার শহরের কলাতলীর বিভিন্ন পযর্টন পয়েন্টে, দরিয়া নগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ার টেকসহ কক্সবাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও উপসড়কে ভিক্ষুকের সয়লাব পরিণত হয়েছে।


কোন একটি স্থানে দাঁড়ালেই চার থেকে পাঁচ জন ভিক্ষুক ভিক্ষা চান। যা অতীতের তুলনায় বেশি। অসহায় ভিক্ষুকদের পাশাপাশি পেশাদার ভিক্ষুকদের ভীড়ে অসহায় ভিক্ষুক এখন কম।


সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো কক্সবাজার শহর জুড়েই অসংখ্য রোহিঙ্গা, অসহায় নারী, বয়স্ক পুরুষ যারা কাউকে দেখলেই সাহায্য প্রার্থনা করছেন। সবার দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পাতছেন। মানিব্যাগ বের করলে বা কেউ গাড়ির দরজা খুললেই বা গাড়ী থেকে নামলেই সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এসব নারীর সঙ্গে থাকছে শিশু সন্তানেরাও।


মায়ের সঙ্গে তারাও করুণ চাউনি নিয়ে তাকিয়ে থাকছে কিছু পাওয়ার আশায়। বেশির ভাগ মধ্যবয়সি এসব নারী কখনোই ভিক্ষুক ছিলেন না। পথে পথে মানুষ বসে আছে ভিক্ষার আশায়। বিভিন্ন পেশার শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে এখন ভিক্ষা করছেন। যার মাঝেই অভাবের চেয়ে স্বভাবের ভিক্ষুক এখন কয়েকগুণ বাড়ছে। ভিক্ষার মূল পুঁজি সহানুভূতি আর ধর্মীয় অনুভূতি। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ।


এরপরও অনেক সময় অসহায়, দুর্বল, দরিদ্র ও পঙ্গুরা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন অপছন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও। অপমানকর হলেও পুনর্বাসন আর ভরণপোষণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। কিন্তু এ ধরনের ভিক্ষুকের সংখ্যা এখন খুবই কম। কয়েক দশক ধরে কক্সবাজার পযর্টন নগরী হওয়ায় গড়ে উঠেছে চক্রের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি।


রীতিমতো এটিকে অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। দিনকে দিন শহরের ভিক্ষুকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রাস্তাঘাট, অলিগলি সবখানেই আছে দুষ্টচক্রের অধীনে ভিক্ষায় নিয়োজিত ভিক্ষুকরা।কক্সবাজার শহর ও জেলা জুড়ে এখন প্রকৃত কত মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি করছে, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই সমাজকল্যাণ দপ্তরে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, আগে পুরো কক্সবাজার জুড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার ভিক্ষুক ছিল। এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পর্যটন এলাকায় স্থানীয়দের চেয়ে  রোহিঙ্গাদের আধিপত্যে সবক্ষেত্রেই।  এইক্ষেত্রেও পিছনে নাই তারা। প্রতিদিন কক্সবাজার শহরে ও জেলার বিভিন্ন স্থানে আনুমানিক দৈনিক প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ভিক্ষাবাণিজ্য হয়ে থাকে। মাসে এই ভিক্ষার টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি টাকা।

সংঘবদ্ধ ভিক্ষুক চক্র ও এলাকাভিত্তিক অনেক প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে চালায় বলে ভিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না।


কক্সবাজার শহরে কোর্ট বিল্ডিং, হাসপাতাল সড়ক, স্টেডিয়াম পাড়া, গোলদীঘির পাড়, বার্মিজ মার্কেট,বাজার ঘাটা, পান বাজার সড়ক, থানা রোড়, ৬নং জেটি ঘাট, বিমান বন্দর সড়ক, ঝাউতলা, সমুদ্র সৈকত পুরা এলাকা, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ডলফিন মোড়, বাস বার্মিনাল মোড়সহ অন্তত ৩০টি পয়েন্টে কাজ করছে এ চক্র।


অল্প বয়সী শিশু ও মধ্য বয়সী নারীদের দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছে একাধিক বড় বড় দালাল চক্র।


সমুদ্র সৈকত এলাকার ভিক্ষুকদের দালাল জানান, ১৫ বছর আগে চাকরির সন্ধানে কক্সবাজারে আসেন তিনি। তারপর একজনের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের দালালির কাজে যোগ দেন। ১০০ টাকা রোজ কাজ শুরু করে এখন তার আয় প্রতিদিন ২০০০-৩০০০ টাকা।


তিনি আরো জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এসব চক্রের পেছনে রয়েছেন। সমুদ্র সৈকত এলাকায় এলাকা ২০-৩০ জনের একটি চক্র এসব ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ করে। এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ভিক্ষুকরা জানান, ভিক্ষাবৃত্তি ঘিরে চলে চাঁদাবাজিও। অন্তত শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ও পযর্টক এরিয়ায় দালাল চক্র ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।


কয়েকজন ভিক্ষুক জানান, কক্সবাজার শহরের আগে স্থায়ীরা পেটের দায়ে ভিক্ষা করলেও এখন তা নাই।শহরের সব জায়গায় রোহিঙ্গারা ভিক্ষা করতেছে নানারকম বেশ ধরে।  অনেকেই প্রতিদিন ২০০ ও ৩০০ টাকার বিনিময়ে কাজ করে থাকে। তাদের কারণে আগের মত আমরা ভিক্ষাও পাই না।


অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দিন দিন ভিক্ষাবৃত্তি যেন পরিণত হচ্ছে লাভজনক বাণিজ্যে। পেশাদার ভিক্ষুকদের উৎপাতে অতিষ্ঠ পযর্টক ও কক্সবাজারবাসী।


গত শুক্রবার শহরের বিভিন্ন মসজিদের সামনে জুমার নামাজের আগে জড়ো হন প্রায় শত শত ভিক্ষুক। মৌসুমী এসব ভিক্ষুকেরা ভিক্ষা করেন সপ্তাহে একদিন।এছাড়াও অনেকেই আছেন, যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষাকেই অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে মুসল্লীরা বিরক্ত হলেও তারা অনেকটা অসহায়।


একজন মুসল্লী বলেন, এদের তো অনেকে কম বয়সী। কাজ করতে পারবে, কিন্তু করবে না। অনেকে আবার বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছে। ভিক্ষার জন্য এরা খুবই জবরদস্তি করে। ভিক্ষা না দিলে অনেক সময় গালাগালও করে। কিন্তু এদেরকে ভিক্ষা দেই না। যারা অসহায় তাদের দেই।

একাধিক পযর্টকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকত এলাকার ভিক্ষুকের উৎপাত কত মারাত্মক রূপ ধারণ করছে।পযর্টকরা জানান, জোর জবরদস্তি করে ভিক্ষা দিতে বাধ্য করে এইসব ভিক্ষুক। তাদের ভিক্ষা না দিতে চাইলেও তারা নানা কটুকথা শোনাই।পরিবার পরিজন ও প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে এসেও হেনস্তার স্বীকার হতে হয় অনেক সময়। এত সংখ্যা ভিক্ষা দেশের অন্য কোন পযর্টক এলাকায় দেখা মিলে না। 


তারা আরো জানান, কক্সবাজারের এইসব ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে কক্সবাজারের পযর্টকের সংখ্যা দিনদিন কমেও যেতে পারে।


এনিয়ে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার জেলা জুড়ে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পযর্টন শহরকে কেন্দ্র এই ভিক্ষাবৃত্তি চরম আকার ধারণ করছে যা অনন্ত দুঃখজনক। রোহিঙ্গা আসার পরেই কক্সবাজারে বেড়ে চলছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। তাদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রকৃতিপক্ষে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠির পুর্ণবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক ভাবে ব্যয় করলে ভিক্ষুকের সংখ্যা কমার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা উল্টো বাড়ছে।


কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, পর্যটক ও স্থানীয়'রা যেন কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হন সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.