ময়মনসিংহে বাসদ (মার্কসবাদী) দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এর ১০৭ তম বার্ষিকী উপলক্ষে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল (২৯ নভেম্বর)বিকেল ৩ টায় রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী) ময়মনসিংহ জেলা সমন্বয়ক শেখর রায়, বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য কমরেড জয়দীপ ভট্টাচার্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা আহবায়ক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফুল হাসান, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জয়নুল আবেদীন পার্ক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী সংগঠক মেরাজ উদ্দীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের জেলা কমিটির সদস্য অজিত দাস।
সভায় বক্তারা বলেন- 'গত জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার এক অভূতপূর্ব সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। আওয়ামিলীগ সরকার গত ১৫ বছর উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ ছিল। এ পরিস্থিতিতে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই গণঅভ্যুত্থানে। ছাত্র জনতা স্লোগান তুলেছে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। অভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা দেখছি স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহলের কারণে জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। সাম্প্রদায়িক হামলা, মাজারে হামলা, মব জাস্টিস, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, শ্রমিক আন্দোলনে গুলির ঘটনা ঘটছে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ছে। জনমনে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আরেকদিকে পতিত স্বৈরাচার নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐক্যকে সংহত করে গণতান্ত্রিক সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করা।'
বক্তারা আরও বলেন- ' দেশের মানুষ বারবার বিভিন্ন আন্দোলনে রক্ত ঝরিয়েছে, শোষণ বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে। কিন্তু এখনও সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসে নি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশে ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষাকারী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হবে না। শোষণমূলক এই রাষ্ট্র ভেঙে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের সংগ্রাম জোরদার করা জরুরি। মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এক্ষেত্রে আমাদের প্রেরণা। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়াতে পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমাদেরও ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। '
বক্তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, জুলাই গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার, দ্রব্যমূল্য কমানো ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ময়মনসিংহে শ্রমজীবী মানুষদের পূনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করা, ময়মনসিংহ জুট মিল চালু, প্রিপেইড মিটার ভোগান্তি ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বন্ধের দাবি জানান। আগামীদিনে এসকল দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) এর নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।