বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দেশে খাদ্য উৎপাদনে রহমতসহ শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রংপুরের তিন দিনব্যাপী জেলা ইজতেমা। এসময় মহান আল্লাহর কাছে চোখের জলে নিজেদের পাপ মুক্তিসহ বিশ্ব মুসলিমের মঙ্গল ও নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনা করে প্রার্থনায় অংশ নেন প্রায় লাখ মুসল্লি।
আজ (৩০ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৩০ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের মুরব্বী মাওলানা মুনিব বিন ইউসুফ। এর আগে ফজরের নামাজ শেষে বয়ান শুরু হয়। মাঝে খাবার বিরতি শেষে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। এসময় তাবলিগে সময় দেয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে ঠিক দুপুর ১২ টায় আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় আধাঘন্টা ধরে চলে আখেরি মোনাজাত। এ বছর রংপুর নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের আমাশু কুকরুল রোডস্থ নিউ জুম্মাপাড়া ঈদগাহ মাঠে তিন দিনব্যাপী এ ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকেই রংপুর জেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকার তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা ইজতেমাস্থলে পৌঁছান এবং রাত্রী যাপন করেন। এছাড়া আজ শনিবার ভোর থেকে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসেন। পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, কার-মাইক্রোবাসা, মোটরসাইকেলে করে ইজতেমাস্থলে পৌছান। ইজতেমার নির্দিষ্ট মাঠ ছাড়াও আশপাশে অবস্থান করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। সকাল ১০ টার মধ্যেই ইজতেমা মাঠের মূল মঞ্চ থেকে আশপাশের সব জায়গা মুসল্লিদের আগমনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এবারে ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে উল্লেখযোগ্য মহিলারাও অংশ নেন। পুরুষের পাশাপাশি তারাও সকাল থেকে ইজতেমাস্থলের আশে পাশের বাড়িতে অবস্থান করেন। অনেকেই কুকরুল বিলের পাশে ফাঁকা মাঠে বসে পরেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
রংপুর নগরীর সিওবাজার এলাকার মোন্নাফ আলী বলেন, গত বছরও রংপুরের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলাম। এবারও অনেক মানুষের সঙ্গে মোনাজাত করলাম। আল্লাহর কাছে নিজের ও পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য দোয়া করেছি। এটা আল্লাহর রহমত আর আমার সৌভাগ্য হয়েছে, এতো মানুষের সাথে মোনাজাত করার তৌফিক দান করেছেন। মিঠাপুকুরের আশরাফ আলী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকা থেকে অংশ নেয়া তাবলিগ সদস্যের সাথে ছিলাম। ইবাদত বন্দেগি করেছি এবং আজকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছি।
নুর মোহাম্মাদ জানান, দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ইজতেমায় এসেছিলাম আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে। আখেরি মোনাজাত করলাম। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। পীরগাছা থেকে সকালে এসেছেন জসিম উদ্দিন। তিনি ভাতিজার সাথে এসেছেন। আখেরি মোনাজাত শেষ হয়েছে, জোহরের নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরবেন। ইজতেমায় রংপুর জেলার ৮ উপজেলা ও মহানগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ অংশ নেন।
মসিউর রহমান জানান, এবারে ইজতেমার মাঠটি সমতল হওয়ায় কোন অসুবিধে হয়নি। ইজতেমা মাঠে তিনদিনের জন্য অবস্থান করছেন এমন কয়েকজন মুসল্লীও মাঠের আয়োজনে সন্তুষ্ঠির কথা জানান এবং আগামীতেও এমন মাঠে ইজতেমা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
ইজতেমায় মাঠের দায়িত্বে থাকা মো. ইউসুফ আলী বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে সুষ্ঠুভাবে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা সমাপ্ত হলো। প্রশাসন, অত্র এলাকাবাসীসহ যারা সময় দিয়েছেন, তাদের সহযোগিতার কারনে এই সফল আয়োজন।
অন্যদিকে ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রশাসনের পাশাপাশি ইজতেমা আয়োজকের পক্ষ থেকেও ছিলো স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও স্কাউট সদস্য। তারাও তৎপর ছিলো, যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। ইজতেমার শেষ পর্যন্ত কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এর আগে ইজতেমার শুরু দিন পুলিশের উধ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মজিদ আলী। এসময় মুসল্লী এবং আয়োজকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ আদায় এবং আম বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুক্রবার ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করে প্রায় এক লাখ মুসল্লী। ইজতেমায় ঈমান-আমলের বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেন তাবলিগের মুরব্বীরা। এবার রংপুর ইজতেমা থেকে ইসলাম, ঈমান, আমলের শিক্ষা ও আল্লাহর দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রায় শতাধিক জামাত বের হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক। এসব জামাতের সাথীরা এক চিল্লা (৪০ দিন) এবং তিন চিল্লা (১২০) পূর্ণ করার নিয়ত করেছেন বলে জানান তিনি।