মহেশখালীর সোনাদিয়া প্যারাবন কেটে দখলকৃত চিংড়ি ঘের পরির্দশন করছেন বন বিভাগ। ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।
কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের বিছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। প্রাকৃতিক অপরূপ সৃজিত জীবন বৈচিত্র সমৃদ্ধ সোনাদিয়া দ্বীপ। যেখানে রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত প্যারাবন, দূষণ ও কোলাহল মুক্ত সৈকত। অসংখ্য লাল কাকড়ার মিলন মেলা, জেগে উঠা চর, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, বন্যা প্রাণী, বিভিন্ন হাঁস প্রজাতি,মাছরাঙ্গা, কাঁদায় চরা নানা পাখিসহ এ দ্বীপের পাখি বৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দ্বীপবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আকাঁ-বাঁকা নদী পথ।
সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন নিধন থেমে নেই। প্যারাবনের গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে চিংড়িঘের। এখনও চলছে অবকাঠামো নির্মাণকাজ। এবার প্রায় কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে ৫০ টির বেশি চিংড়িঘের নির্মাণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
উক্ত ঘটিভাঙা-সোনাদিয়া নিধনকৃত প্যারাবন পরিদর্শন করেছেন বনবিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ সাজমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব আলীসহ বন বিভাগের একটি টিম লাখ লাখ প্যারাবনের বাইন গাছ নিধন করে নিমার্ণকৃত ঘের গুলো পরির্দশন করেন। এসময় ঘটিভাঙা বিট কর্মকর্তা ভিবাইশ, স্টাফ মোস্তাফিজসহ অন্যান্য স্টাফরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিনে সকালে সোনাদিয়া সরেজমিনে দেখা যায়, চিংড়িঘেরের ভিতর বাইন গাছের গোড়ালী উপড়ে ফেলার নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকেরা গাছপালা কেটে সাফ করেছেন। কিছু অংশে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্য চোখে পড়ে।
জানা গেছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে বেজার সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকা পালন করায় প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের নিমাণ করার মত দুঃসাহস করেছেন স্থানীয় দলীয় ব্যানারে ভূমিদস্যুরা।
মহেশখালীর সোনাদিয়া প্রায় ৬ হাজার একর জায়গায় গত জানুয়ারি থেকে প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণ, চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ তৈরি করা হচ্ছিল। তারা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন মহেশখালীর (ইসিএ) এলাকা সোনাদিয়া উপদ্বীপ এবং কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৪৯১৬ হেক্টর এলাকার (ইসিএ) অন্তত ২০ টির অধিক জায়গায় লাখ লাখ বাইন, কেঁওড়া, কেয়া গাছের প্রাকৃতিক বন (ম্যানগ্রোভ) কেটে সেখানে বাঁধ নির্মাণ করে সরকারি জমি দখল করে।
গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘটিভাঙা- সোনাদিয়ার বিভিন্ন স্থানে সরকারি ভূমির প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের, লবণের মাঠ, মাছের প্রজেক্ট করে আসছিল স্থানীয় দলীয় সাইনবোর্ডে ব্যক্তিরা। সরজমিনে পরিদর্শন করেছি এই প্যারাবন নিধন করে যে চিংড়ি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যৌথ অভিযানে নেমে উচ্ছেদ করে বনের জায়গা বনে ফিরিয়ে আনা হবে।
জানা যায়, সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন, প্রকৃতি, মাটি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি সংঘটিত হয়েছে তার মূল্যমান ইকোসিস্টেম সার্ভিস ভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে সোনাদিয়া দ্বীপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে সরকারের অনুকূলে ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমির বরাদ্দ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে বেজাকে এ বরাদ্দ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সোনা দিয়া জমি বরাদ্দ হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আইনজীবী হাসানুল বান্না আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। এছাড়াও বন বিভাগের জায়গা বেজা কর্তৃপক্ষের অনুকুলে চলে গেলে ভূমিদস্যুরা বনের প্যারাবন নিধন করে দখল শুরু করেন। বন বিভাগের অনুকুলে থাকা অবস্থায় দখল করে ঘের নিমার্ণ তো দুরের কথা প্যারাবনের বাইন গাছ কাটার মত দুঃসাহস করেনি ভূমিদস্যুরা। তবে (বেজা) ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার জমির বরাদ্দ স্থগিত হওয়ায় বন বিভাগে নতুন করে আশার আলো সঞ্চার হওয়ায় বন বিভাগ বনের জায়গায় বনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যাগ নিবেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পরিবেশবাদী সংগঠন ধরা মহেশখালী শাখার সভাপতি মৌলভী মোহাম্মদ ইউনুচ।
সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ সাজমিনুল ইসলাম বলেন, সরেজমিন গিয়ে দেখেছি যেভাবে মহেশখালী দ্বীপের রক্ষাকবচ প্যারাবনের লাখ লাখ বাইন গাছ সাবাড় করে হাজার হাজার একর সরকারি জায়গা দখল করে চিংড়ি প্রকল্প নিমার্ণ করা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh