ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের উত্তর জুরকাঠি দাখিল মাদ্রাসায় ক্লাস চলাকালীন সময় পাঠদান ফাঁকি দিয়ে জমির দালালি করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, উত্তর জুরকাঠি আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী জিয়াউল হাসান (সোহাগ মাঝি) কাগজে কলমে মাদ্রাসার শিক্ষক থাকলেও এলাকায় সে একজন জমির দালাল বলেই পরিচিত। মাদ্রাসার ক্লাস চলাকালীন সময় সহকারী মৌলভীকে দপদপিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে ভুমি অফিসে আসা সেবা গৃহিতদের সাথে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায় এবং বেশিরভাগ সময় কাটান ভূমি অফিসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তাকে আমরা ভুমি অফিসের দালাল বলেই জানি এবং তিনি টাকার বিনিময়ে ভুমি অফিসের কর্মকর্তারদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ সমাধান করে দেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় ক্লাস চলাকালীন সময় দপদপিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে জিয়াউল হাসানকে (সোহাগ মাঝি) সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে সহকারী মৌলভী জিয়াউল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে আসলে মাদ্রাসা সুপারকে জানিয়ে আসি। এবং আমার এ বিষয়ে তিনি অবহিত রয়েছেন।
জানা যায়, মাদ্রাসাটিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৭ জন। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন ২০ জন। ঐ ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে অন্যতম হলেন সোহাগ মাঝি। সরকারি বিধান মতে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে তিনি অন্যকোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু সোহাগ মাঝি’র কাছে এই আইন হাস্যকর।
এর আগেও মাদ্রাসায় পাঠদান না করে অফিস চলাকালীন সময়ে টিকিট কাউন্টারে “টিকিট মাস্টার হিসেবে” কাজ করতেন জিয়াউল হাসান। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কতৃপক্ষের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি মজিবর মাঝির ভায়রা ছেলে সহকারী মৌলভী জিয়াউল হাসান ওরফে সোহাগ মাঝি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে মাদ্রাসায় চাকরি নিয়েছেন।
২০১৫ সালের (১৩ অক্টোবর) মঙ্গলবার বিকেলে ঝালকাঠী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনকারী ছিল ২২ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে ১৭ জনকে না জানিয়ে মাত্র ৫ জন নিয়ে নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
মাত্র ৫ জন নিয়ে সাজানো পরীক্ষার বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানাজানির এক পর্যায়ে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে কতৃপক্ষ। পরিক্ষা স্থগিত করার মাধ্যমে রহস্যজনক কারনে সহকারী মৌলভী হিসেবে নিয়োগ পান সহকারী মৌলভী জিয়াউল হাসান (সোহাগ মাঝি)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মত নিয়োগ বানিজ্য, অব্যবস্থাপনা ও জালিয়াতি করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে মাদরাসা সুপার মো. রুহুল আমিন মুঠোফোনে বলেন, আমি ছাত্র খুঁজতে বেড়িয়েছি এখনো মাদ্রাসায় যাইনি তবে সে আজকে মাদ্রাসায় গিয়েছে কিনা আমি জানিনা। এবং তিনি আমাকে কোথায়ও জানিয়ে যায়নি। সহকারী মৌলভীর এমন কর্মকান্ডে আমার কিছু জানা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার আজিম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা সম্ভব হয়নি।