× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

লোকদেখানো অভিযানে সন্তুষ্ট নয় পদ্মা পাড়ের মানুষ

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর প্রতিনিধি।

২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৪ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ক্রয়-বিক্রয় চলছে। এতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ দিনে নদীর পাড়ের বসতভিটা ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা।

জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বাবুর চর, বিলাশখান, নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর পয়েন্ট ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এলাকায় নদীর পাড় ঘেষে দিন-রাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ধসে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডসহ আশপাশের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা। চলতি মাসের শুরুর দিকে এই বাঁধে ধস শুরু হয়। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে দেড় কিলোমিটার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ১০০ মিটার পর্যন্ত ধসে পড়ে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ বাঁধ নির্মাণ করেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে যেকোনও সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বাঁধ সহ সরকারি-বেসরকারি নানান স্থাপনা ।

মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযানে বালু উত্তলন কাজে নিয়জিত শ্রমিক ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা। অভিযোগ রয়েছে আটককৃত দের নূন্যতম জরিমানা করে ছেড়ে দেয় প্রশাসন। তাই জরিমানা দিয়ে পূনরায় শুরু হয় বালু উত্তলন। এদিকে নূন্যতম জরিমান ও দায়সারা অভিযান করে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রশাসন। তবে প্রশাসনের লোকদেখানো অভিযানে সন্তুষ্ট নয় ভাঙন কবলিত পদ্মা পাড়ের মানুষ। মাঝে মাঝে কিছু অভিযান হলেও অবৈধবাবে বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তলন চক্রের অন্যতম মূল হোতা রফিখ খা ও রফিক মাদবর তাদের নেতৃত্বে ১০ টি, রিপন শেখ এর নেতৃত্বে ৪ টি, ফিরোজ খানের নেতৃত্বে ৩ টি, লতিফ মল্লিকের নেতৃত্বে ২ টি, খালেক মাদবরের নেতৃত্বে ২ টি, বোরহান মল্লিকের নেতৃত্বে ২ টি, সাহেদ মল্লিকের নেতৃত্বে ২ টি, নজরুল মল্লিকের নেতৃত্বে ৪ টি , মোস্তফা খার নেতৃত্বে ২ টি ড্রেজার নিয়মিত নদী থেকে বালু উত্তলন করে। এছাড়াও নামে-বেনামে আরও বেশ কয়েকটি ড্রেজার রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জাজিরা, নড়ীয়া ও ভেদরগঞ্জে সরকারি ইজারাভুক্ত কোনও বালুমহাল না থাকলেও অবৈধভাবে প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ২০-৩০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর তা শত শত বলগেট, কার্গো ও ট্রলার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। যে চক্রটি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে তাদের এ সংক্রান্ত কোনও অনুমতি বা অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু। পেশিশক্তির বলে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ জন্য এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী ঘর-বাড়িসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু লোকজন ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম।

তারা আরও অভিযোগ করেন, হঠাৎ করে ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। বালু উত্তোলনের সরকারি নীতিমালা থাকলেও কোনও তোয়াক্কা করেন না ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রটি। ইজারা না নিয়েই চলছে এই হরিলুট। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব ড্রেজার মেশিন বন্ধ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তারা।

কুন্ডেরচর এলাকার কৃষক আবু সাইদ জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার ভাঙনের ভয়াবহ তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও প্রতিকার মেলেনি।

নৌপুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘পদ্মাসেতু এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। দিনে অথবা রাতে কোনো অবস্থাতেই পদ্মানদীতে যেন ড্রেজার থাকতে না পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো। পদ্মানদী থেকে বালু উত্তোলন করবে, এটা যেন কেউ চিন্তাও না করতে পারে। এখান থেকে আমি নিজেও উপস্থিত থেকে অভিযান পরিচালনা করবো।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, 'নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিছুদিন আগেও বালু উত্তোলনকারীদের জরিমানা করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.