ব্রিটিশ আমলের এক গ্রামে এক বাড়ি। ৪ জনের বসবাস। বাড়িটি আন্তর্জতিক ও দেশীয় মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ব্যাপকভাবে। দেশের দূরদূরান্তের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল বাড়িটি একনজর দেখার জন্য। ভাইরাল সেই বাড়িসহ সাড়ে ২২ শতাংস জমি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাইরাল সেই বাড়ির মালিকের মেয়ের জামাতা সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত সার্জেন্ট আনিসুর রহমান। তিনি জানান, সড়ক থেকে বাড়িতে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। মানুষের ক্ষেতের আইল দিয়ে বাড়িতে আসা যাওয়া করতে হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে পানি বন্দি থাকে কয়েক মাস। শ্বশুড়ে এখন বয়স হয়েছে। তার জন্য বাড়িতে আসা যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ঐ গ্রামেই সড়কের পাশে নতুন একটি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নে উমানাথপুর গ্রাম।
পুরো গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি। আর তাতে থাকেন চার জন, ভোটার রয়েছে তিন জন। স্থানীয় গুটি কয়েক মানুষ এ গ্রামের অস্তিত্ব জানলেও বেশিরভাগ মানুষ জানে না গ্রামটি সম্পর্কে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলিল লিখক সিরাজুল সরকার (৭০) এই গ্রামের একমাত্র বসতি। মাত্র ২২ শতক জমির ওপর নির্মিত এই বাড়িতে রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, আছে একটি পুকুর ও একটি টয়লেট ছাড়াও কিছু গাছগাছালি। অন্যের জমির আইল দিয়ে এ বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। আর এ বাড়ি ঘিরেই গঠিত হয়েছে ‘উমানাথপুর’গ্রাম। এ গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশে গ্রামের মধ্যে রয়েছে- উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে হরিপুর, পূর্বে উদয়রামপুর এবং পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর ও হরিপুর গ্রাম।
প্রতিবেশীরা বলেন, ‘একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম। এটি একটি আজব ঘটনা। প্রথমে এ খবর শুনে অনেকেই বিশ্বাসই করে না। কিন্তু এটিই সত্যি, এই বাড়ির জনসংখ্যা মাত্র চারজন।’
দর্শনার্থীরা জানান, গ্রামটি বেশ ভাইরাল হয়েছে। গাজীপুর থেকে গ্রামটি দেখতে এসেছি। এসে শুনলাম বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেছে।
বাড়ির মালিক সিরাজ সরকার (৭০)জানান, ‘আমার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও ভাই মজিবুর রহমান সরকার ও মা সামর্থ্যবান ছিলেন এই বাড়ির মূল মালিক। তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে পরিবারসহ এখন বসবাস করছি। পরিবারে মোট সদস্য পাঁচজন। এক ছেলে ছিল মারা গেছে। এখন আমি, স্ত্রী ও পুত্রবধূ ভোটার। নিজের কিছু জমিজমা চাষাবাদ করে ও উপজেলা সদরে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। রাস্তাঘাট না থাকায় অন্যের জমির আইল দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। বর্ষকালে একরকম ঘরবন্দি থাকতে হয়। নিজের বোনেরা থাকেন বাড়ির পেছনে অন্য গ্রামে।’ গত রবিবার বাড়িটি আমার ভাগিনা সম্পর্কের আব্দুল মান্নানের কাছে সাড়ে ২২ শতাংস জমিসহ বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। একই গ্রামের সড়কের পাশে
একটি নতুন বাড়ী নির্মাণ করছি। এখন উমানাথপুর গ্রামে বাড়ীর সংখ্যা হবে দুটি।
ভাইরাল সেই বাড়ি কিনে নেয়া আব্দুল মান্নান জানান, বাড়িটি বিক্রি নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। কিছু টাকাও দিয়ে রেখেছিলাম। গত রবিবার বাড়িটি আমার নামে দলিল করে দিয়েছেন।