ছবিঃ জসিম উদ্দিন বাচ্চু।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যবাহি নদের নাম ভৈরব। আর এই ভৈরব নদ ঘিরে উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রথম শ্রেণির এক নদীবন্দর যার নাম হয়েছে নওয়াপাড়া নৌবন্দর। ব্যবসায়ীদের জন্য নদী ও বন্দর আর্শীবাদ হলেও অপরিকল্পিত খননের (ড্রেজিং) কারণে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে দুই গ্রামের শত শত পরিবার।
গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, প্রায় দুইশত ঘরবাড়ি, ২৫ বিঘা কৃষিজমি, অসংখ্য গাছগাছালি ও একটি রাস্তা। এবার নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাহসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ভৈরব নদে অপরিকল্পিত খননের ফলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলার বাঘুটিয়া ও শুভরাড়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী দুই গ্রামের মানুষ। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙন রোধে নেওয়া হয়নি সরকারি কোনো ব্যবস্থা। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে ভাঙনের পরিধি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন ওই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া ভূগিলহাট গ্রামের একটি কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, অসংখ্য ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাহসহ শতাধিক ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গাছগাছালি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর অপর প্রান্তে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক খনন (ড্রেজিং) কার্য অব্যাহত রয়েছে। এসময় ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. নাঈম সরদার বলেন, পাঁচ বছর ধরে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তখন থেকে বর্তমানের ভাঙন অনেক ভয়াবহ। তিন বছর পূর্বে ঈদগাহ সংলগ্ন একটি রাস্তা নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে। এরপর এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা বাঁশ দিয়ে ভাঙন রোধে বার বার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। তাই ভাঙন ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগ জরুরী। অন্যথায় অল্প দিনের মধ্যে ঈদগাহ তারপর মসজিদ নদীর ভেতর হারিয়ে যাবে।
ভূগিলহাট গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি মিলিয়ে প্রায় ১০ বিঘা সম্পত্তি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। বাকি রয়েছে শেষ আশ্রয়স্থল। একই অভিযোগ করেন রবিউলের প্রতিবেশী হারান বিশ্বাস, ফাতেমা বেগমসহ অসংখ্য পরিবার। শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামের ইসহাক সরদারের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, পাশাপাশি ১৫টি বসতঘর সহ কয়েকটি আম বাগান ভাঙনের কারণে নদীতে হারিয়ে গেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তৈয়েবুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, ২শ ঘরবাড়ি, ২৫ বিঘা কৃষিজমি ও গাছগাছালি। নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ধর্মীয় স্থাপনা, বসতবাড়ি ও কৃষিজমি। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক অপরিকল্পিত নদী খননের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সব হারানো পরিবারগুলো সরকারি সহায়তা থেক বঞ্চিত রয়েছে। তাদের সহায়তা প্রয়োজন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী খননের বালি বা পলিমাটি বস্তাবন্দি করে ভাঙন রোধে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।
শুভরাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ভাঙন ঠেকাতে সরকারকে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে দুই গ্রামের মানুষ রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, ‘নতুন যোগদান করেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ’অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করা হচ্ছে না। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ চলছে। অভয়নগরের পাইকপাড়া ভূগিলহাট ও শুভরাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিত মানুষের অনুরোধে নদীর অপরপ্রান্তে খননের কাজ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে খননের বালি বা পলিমাটি ভাঙন রোধে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে।’
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী খননের কাজ করলে ফলাফল ভালো হত। ভৈরব নদে ভাঙনের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। যত দ্রুত সম্ভব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh