কুমিল্লার তিতাসে নিখোঁজের দেড় মাসেও সন্ধান মিলেনি দুই সন্তানের জননী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৫)এর। গত ৫ সেপ্টেম্বর জান্নাতের প্রতিবেশী প্রেমিক তারেক মাহবুব মুন্নার ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হলেও মুন্না দিব্যি ঘুরা বেড়াচ্ছে।জান্নাতুল ফেরদৌস উপজেলার সাগরফেনা গ্রামের জামাল সরকারের মেয়ে ও মুন্না একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
জানা যায়, জান্নাত নিখোঁজের পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান না পেয়ে এবং মুন্নার পরিবারকে জানালেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় গ্রামবাসীকে অবগত করে, গত ১১ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের মা হালিমা বেগম বাদি হয়ে মুন্না ও তার মামা নাইমসহ ৭জনকে আসামি করে তিতাস থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এদিকে মামলার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জান্নাতকে উদ্ধার করতে পারেনী তিতাস পুলিশ।
অপরদিকে মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি তারেক মাহবুব মুন্না ঘটা করে বিয়ে করে সে সহ অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও কাউকেই গ্রেপ্তার করছেনা পুলিশ। ফলে পুলিশের এমন উদাসীনতা নিয়ে জনমনে নানাহ সন্দেহের উদয় হচ্ছে। দুই সন্তানের জননী জান্নাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে না মেরে ফেলেছে এমন খবর পেতে এবং মেয়েকে খুঁজে পেতে পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভিকটিমের পরিবার।
এদিকে জান্নাত নিখোঁজের পর থেকেই তার ব্যবহৃত মোবাইলের বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে জান্নাত খারাপ মেয়ে হিসেবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন কর্মীদের ম্যাসেঞ্জারে ফেইক আইডি দিয়ে জান্নাতের আপত্তিকর চ্যাটিং সম্পর্কের তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা, মুন্নাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জান্নাতের সন্ধান পাওয়া যাবে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার জগতপুর ইউনিয়নের সাগরফেনা গ্রামের জামাল সরকারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে পার্শ্ববর্তী কানাইনগর গ্রামে ২০১৪ সালে বিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ৫ বছরের সংসারে দু'টি সন্তানও জন্ম হয়। কিন্তু জান্নাতের স্বামী আব্দুল হান্নান প্রতিবেশী এক মেয়ের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে গেলে তাদের সংসারে অসান্তির সৃষ্টি হয় এবং সংসার ভেঙ্গে যায়। এদিকে জান্নাত স্বামীর সংসারে থাকাবস্থায় সাগরফেনা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে মুন্না জান্নাতকে ক্রমাগত প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে রাজি করায় এবং উভয়ে এক সময় শারীরিক সম্পর্কও জড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি এলাকাবাসীর মাঝে জানাজানি হলে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাগরফেনা গ্রামবাসী দফায় দফায় গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে ৫লাখ টাকা দেনমোহরে জান্নাত ও মুন্নার বিবাহ ধার্য্য হয়। কিন্তু মুন্না জান্নাতকে বিয়ে না করে শালিসের দিন রাতেই গোপনে প্রবাসে চলে যায়। পরে চলতি বছরের আগস্ট মাসে ছুটিতে দেশে এসে মুন্না ঘটা করে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। বিষয়টি জানতে পেরে মুন্নার সাথে জান্নাতের ঝাগড়া-ঝাটি শুরু হয় এবং মুন্নাকে সুখে থাকতে দিবে না বলে হুমকি দেয়।
এরপরই মুন্না কৌশলে গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে জান্নাতের সাথে যোগাযোগ করে মৌটুপী বাসস্টান্ডে দেখা করতে বলে। তার কথা অনুযায়ী অটোরিকশা যোগে জান্নাত সেখানে যায় এবং সেখান থেকেই জান্নাতের আর কোন হদিস (খোঁজ) মিলেনি।
মামলার বাদি জান্নাতের মা হালিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য মামলা করলেও পুলিশ গত দেড় মাসেও আমার মেয়েকে জীবিত না মৃত পুলিশ কোন তথ্য দিতে পারেনি। আমার মেয়েকে মুন্না গুম করে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে; তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে না। মুন্নাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমার মেয়ের সন্ধানের দাবী জানাচ্ছি।
অপরদিকে, পুলিশের এমন উদাসিনতায় নানাহ মুখরোচক কথার চাউড় চলছে এলাকাজুড়ে। এলাকাবাসী বলছেন, মুন্নার পরিবারের প্রতি পুলিশের দুর্বলতাই রহস্য প্রকাশ পায়। তাদের দাবি মুন্নাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জান্নাতের সন্ধান পাওয়া যাবে।
জান্নাতের মামা এনামুল হক বলেন, আমরা জান্নাতকে উদ্ধারের জন্য কুমিল্লা এসপি স্যারের কাছে গিয়েছি। থানায় প্রতিদিন যাচ্ছি। পুলিশ শুধু বলে "আমরা চেষ্টা করছি।' তাদের সন্দেহ, পুলিশ কি আসলেই চেষ্টা করছে?
জান্নাত অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাউছার সাংবাদিকদের বলেন, রহস্য উন্মোচনে আমরা চেষ্টা করছি এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার ট্রেকিং করে কিছু লোকেশন পেয়ে অভিযানে গেলে সেখানে মুন্নাকে পাওয়া যায়নি। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।