× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শরীয়তপুর

স্কুলের চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় হিসাব রক্ষকের নামে মামলা!

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর প্রতিনিধি।

২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:১৯ পিএম

ছবিঃ আশিকুর রহমান হৃদয়

দেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে দেখা যায় প্রাইভেট স্কুল। প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান লেখা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে চলে রমরমা শিক্ষা ব্যবসা। এমনই একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষক পদে চাকুরি করতেন মোদাচ্ছের হোসেন। কর্তৃপক্ষের অমতে চাকুরি ছেড়ে দেওয়ায় তার নামে দেওয়া হয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, হত্যার হুমকি ও ঘুষ লেনদেনসহ নিয়োগ বাণিজ্যের মামলা। মামলা দিয়ে বিপাকে ফেলে টাকা নেওয়ার জন্যই এমন মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোদাচ্ছের হোসেন। 

সম্প্রতি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কুলকুড়ি এলাকার রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। 

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষা দপ্তরের অনুমতিসহ প্রতিষ্ঠানের থাকতে হয় সুশিক্ষিত শিক্ষক প্যানেল, ম্যানেজিং কমিটি, ব্যাংক হিসেব, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ। কিন্তু রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির নেই শিক্ষক প্যানেল, ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ। এরপরেও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ জন হলেও সরজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় ১২ জন। 

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামছুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অলাভজনক সমাজসেবা মূলক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি নেই, ব্যবস্থাপনা পরিচালক একজন। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন হিসেব রক্ষক পদে চাকুরি করা মোদাচ্ছের হোসেনও একজন সহকারী পরিচালক। একজন পরিচালক আর একজন সহকারী পরিচালক দ্বারা বছরের পর বছর চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। হয়নি ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং। ব্যাংক হিসেবের রেজুলেশন হয়নি ঠিকমত।

রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির প্রাক্তন হিসেব রক্ষক মোদাচ্ছেরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রম দিয়ে এক পর্যায়ে আর্থিক অনটনে পড়ে চাকুরি ছেড়ে দেন তিনি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামছুল আলম ঢাকাতে থাকার কারণে হিসেব রক্ষক পদে চাকুরি করা মোদাচ্ছেরকেই প্রধান শিক্ষক, পরিচালক ও হিসেব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হতো। প্রতিষ্ঠানের সকল হিসেব ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বুঝিয়ে দিয়ে মোদাচ্ছের চাকুরি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে দিন দিন কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোদাচ্ছের হোসেনের নামে মিথ্যা মামলা করেন শামছুল আলম।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামছুল আলমের বিরুদ্ধে গ্রামের অসহায় বেশ কয়েকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, হিসেব রক্ষক মোদাচ্ছের হোসেনকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসময় তিনি প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের হিসেব ঠিকমত পরিচালনা না করে সাড়ে ১১ লাখ টাকার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুত করে মোদাচ্ছের তার নিকট আত্মীয়সহ ঘুষ বাণিজ্য করে অন্যান্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। এমন সকল অন্যায় কাজ করে মোদাচ্ছের ছাড়পত্র ছাড়াই চাকুরি ছেড়ে চলে যায়। এরপর ইমন নামে একজনকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামছুল আলমকে হত্যার হুমকি দেয়।

ভূক্তভোগী মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিকানার শেয়ার দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিনা বেতনে দীর্ঘ বছর আমাকে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকুরি করায় শামছুল আলম । আর্থিক অভাবে পড়ে আমি চাকুরি ছেড়ে দেবার পরে হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমার নামে মামলা হয়েছে। আমি গরীব মানুষ, বর্তমানে একটি মসজিদে ইমামতি করি। টাকা পয়শা নেই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে তদন্ত না করেই ঘটনার সত্যতা রয়েছে বলে রিপোর্ট দাখিল করেছেন। অথচ আমি কোনো দিনই শামছুল আলমের ঢাকার বাসায় যাইনি। পুলিশকে টাকা দিয়ে প্রভাবিত করে শামছুল আলম এমন কাজ করিয়েছেন। আমি ন্যায় বিচার চাই। শামছুল আলম যেভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, তাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই হয় না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামছুল আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মোদাচ্ছের আমার প্রতিষ্ঠানে হিসেব রক্ষক ও সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকুরি করে কাউকে না জানিয়ে সাড়ে ১১ লাখ টাকা নিয়ে চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর তার কাছে হিসেব চাওয়া হলে তিনি আমার ঢাকার বাসায় এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানের হিসেব রক্ষক সহকারী পরিচালক কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পরিচালনা পর্ষদে আছেন কিনা? দীর্ঘদিনে ম্যানেজিং কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ তার কাছ থেকে হিসেব কেন নেয়নি? এমন প্রশ্ন করা হলে শামছুল আলম বলেন, আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোদাচ্ছের হোসেন প্রতিষ্ঠানটির হিসেব রক্ষক, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সকল দায়িত্বই পালন করতেন। এই দুইজন ছাড়া কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজিং কমিটি নেই।

আপনি মামলায় উল্লেখ করেছেন, মোদাচ্ছের ঘুষ খেয়ে আপনার নিয়োগকৃত শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করে তার নিকট আত্মীয়সহ অন্যান্য শিক্ষকদের তার নিজের মত করে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা কারা? এমন প্রশ্নে তিনি এই প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদককে রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির দুর্নীতি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। কোনো গণমাধ্যম কর্মী যদি রাবেয়া আইডিয়াল একাডেমির আশেপাশে যায়, তবে তার পা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও প্রদান করেন তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.