মাদারীপুরে বেড়েছে সবজি, মাছ ও ডিমসহ সব ধরণের নিত্যপণ্যের দাম। বৃহস্পতি (১৭ অক্টোবর) সকালে শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান বাজারে দেখা গেছে ৪০০ টাকা কেজি দরে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে ও বিক্রি করতে না পারায় ডিম আমদানী সাময়িক বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দেশের কোনো জেলা থেকে ডিমের ট্রাক আসেনি। বাজারে ডিম না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডিম আমদানী সাময়িক বন্ধ থাকবে। মূলত বুধবার থেকে বাজারে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা মাঝে-মাঝে বাজার মনিটরিং করছেন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করছে। কিন্তু টাস্কফোর্সের অভিযানের পরও নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতি থামছে না। টাস্কফোর্স ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসছে ব্যবসায়ীরা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন চরম সংকটে। দিন মজুররা প্রতিদিন যা আয় করেন কাঁচা বাজারে গেলে তাদের পকেট শূণ্য হয়ে যাচ্ছে।
মাদারীপুর পুরানবাজার আড়তে, খুচরা বাজার ও ইটেরপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে, মিস্টি কুমড়া ৬০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, করলা ৮০, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে। টমেটো ২৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০, কুশি ১২০, পটল ৯০, কচুরমুখি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় গড়ে ১০০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে। ব্যবসায়ীদের দাবী সরবরাহ কম, তাই দাম একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বাজারে কোন পণ্যের অভার নেই। পর্যাপ্ত পরিমানে সব্জী বাজারের প্রতিটি দোকানে সাজানো রয়েছে। এছাড়া মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে কোন ইলিশ মাছ নেই। ফলে অন্যান্য মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রুই, কাতল, গ্রাসকার্প, নাইলোটিকা, চায়না পুটি, সিলভারকার্প আকার ভেদে সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টেংরা মাছ, চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। চাষি কৈ ২০০-২৫০ টাকা, শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৬০০টাকা, ল্যাঠা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা, নদী ও বিলের ছোট আকারের পুটি মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, মলঙ্গী মাছ ২২০-৩০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার ঝাউদি এলাকার রিকশাচালক বাদশা মিয়া বলেন, ‘আগের মতো কামাই নাই, দিনে যা কামাই করি তা দিয়ে সংসার চলে না। সারাদিনে কামাই করেন ৫‘শ টাকা। কাঁচা বাজারে গেলেই শেষ, চাল, ডাল, তেল, নুন কিনবো কি দিয়ে? আমাগো ভাগ্যে তো মাংস জোটে না, মাছ কিনতে গেলে মাথা ঘোড়ে। বাজারে শাকসব্জী ও অন্যান্য আনাচপাতির অভাব নাই, কিন্তু দাম একেবারে নাগালের বাইরে।’
আনোয়ার হোসেন নামে আরও এক রিকশাচালক বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগেও ধনেপাত, কাঁচা মরিচসহ সব ধরণের সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। বর্তমানে সব ধরণের সব্জীর দাম আকাশ ছোঁয়া। সকল প্রকার মাছের দাম বেড়েছে, আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এখন কোন রকমভাবে খেয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
মাদারীপুর পুরান বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে একটা রেট বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই নির্ধারিত দামে ডিম কিনতেও পারছি না। এই পরিস্থিতিতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা আমদানী বন্ধ রেখেছি। পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ যে সব জেলা থেকে ডিম আনা হয় সেখানেও আমদানী কম। খামারীরা সরবরাহ করতে পারছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আর নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে কোন লাভ হয় না। বরং লোকসান গুনতে হয়।’ তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াতে কারসাজি করছে বলে দাবী সাধারণ ক্রেতাদের। ডিমসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ভোক্তাদের দাবী সিন্ডিকেট ভেঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হবে। তা না হলে বাজার আরো অসহনীয় হয়ে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুবোধ কুমার দাস বলেন, ‘সরকার ডিমের দাম বেঁধে দেয়ার পরেও বাজারে ডিম ছাড়ছেন না খামারিরা। আমরা লোকাল কয়েকটি খামার ভিজিট করেছি, তাদেরকে আমরা মোটিভিশন করছি, মনিটরিং করছি। তাদেরকে বলা হয়েছে সরকারী নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে; তা না হলে পরে কোন আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। আসলে তারা বলছেন; সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে; এতে তাদের পোষাচ্ছে না। আর তারা যেটা বললো তাদের আবার কন্ট্রোলিং আছে উপর থেকে, তাদের একটা সিন্ডিকেট আছে বরিশালের স্বরূপকাঠিতে। সিন্ডিকেট থেকে একটা দাম নির্ধারণ করে তাদের বলছে, এই দামের নিচে কোন ডিম বিক্রি করা যাবে না। মূলত স্বরূপকাঠি থেকে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার এবং খামারীদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা রাজী হয়েছে সরকারি নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে। আর এমন তো নয় যে, ডিম সংরক্ষণ করা যাবে, বিক্রি না করলে তো ডিম পচে যাবে। আশা করছি ২/১ দিনের মধ্যে এ সমস্যা কেটে যাবে।’