রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল চত্বরসহ আশপাশে প্রতিনিয়ত ফেলানো হয় খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা ময়লা-আবর্জনা। চিকিৎসক, নার্স, রোগীসহ হাসপাতালের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্য জমা হয় এখানে। এসব ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ অবস্থায় রমেক হাসপাতাল পরিদর্শনসহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে রংপুর জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের নেতৃত্বে ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মেডিকেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন।
এ সময় রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ওয়ার্ডগুলো ময়লা-আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছো, ব্যবহার অনুপযোগী টয়লেটসহ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দেখে অনেকটাই খারাপ লাগছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ৩০ কর্মচারী দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করলাম। হাসপাতালের চিকিৎসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল পরিদর্শন অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটসোর্সিং নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে, সাইকেল গ্যারেজের বিপরীতে, পূর্ব গেটের প্রবেশমুখসহ হাসপাতাল চত্বরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকাসহ সচেতনতার অভাবে যত্রতত্র ভাবে প্রতিনিয়ত খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলছেন রোগীর স্বজনরা। আর হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ফেলছেন মেডিকেল বর্জ্যসহ নানা আবর্জনা।
এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। সুস্থ হতে এসে অনেকেই হাসপাতালের বাইরের নোংরা পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় হামিদা আফরোজ বলেন, এখানকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। সবদিকেই দেখবেন শুধু ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এসব আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্য নিয়ম মেনে অপসারণ করা হচ্ছে না। এ কারণে কোনো আবর্জনার স্তূপ পঁচে সেখান থেকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সাংবাদিক লেখালেখি করলে কয়েকদিন খুব তৎপরতা থাকে। এরপর আবারো সেই আগের অবস্থা তৈরি হয়।
নতুন ভবনের কাছে কথা হয় ঠাকুরগাঁও থেকে আসা এক রোগীর স্বজনের সাথে। আরিফ হাসান নামে এই ব্যক্তি বলেন, ভেতরের অবস্থা ভালো। মোটামুটি আগের চেয়ে গন্ধ কম। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। এখান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বেডে থাকা রোগীরা বাইরে থেকে আসা দুর্গন্ধে অস্বস্তিতে থাকেন। সবার জন্যই এই পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, আজকে দেখলাম জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগেও নাকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান করেছে। আমরা সবাই যদি সচেতন না হই তাহলে শুধু অভিযান চালিয়ে পুরো হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর করা সম্ভব নয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে এটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থাও একই। সবার সুস্থতার কথা চিন্তা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারপাশ সবসময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।