অভাবের সংসার জাকির হোসেনের। ছোট ভাই আলী হোসেনকে তিন বছর আগে বিয়ে করিয়ে ধার দেনা করে পাঠিয়ে দেয় বিদেশে। ভাই বউ থাকে তাদের সাথে বাড়ীতে, লোলুপ দৃষ্টি পড়ে লম্পট বাদলের। পরিবারের ইজ্জত বাচাঁতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে লম্পট বাদলের স্বীকার হয়ে হাত হারাতে হয় জাকিরের।
এটাই কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর ? সে কোন দোষ করে নাই, প্রতিবাদ করে ছিল। এটা কি তার অপরাধ? তিনি তো কখনও মানুষের ক্ষতি করেননি। আমার স্বামীর ডান হাত কেটে ফেলতে হয়। হাতটাই ছিল তার কামাই রোজগারের একমাত্র সম্বল আজ ১৩ দিন ধরে চুলায় আগুন জ্বলে না। ঘরে রান্না করার মত চাউল নাই, আড়াই কেজি চাউল ছিল, আমার স্বামী বাজার যাওয়ার সময় বইলা গেছে বিকালে চাউল কিনিয়া আনমু। এখন আমার স্বামী হাসপাতালে বিছানায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। দুই সন্তানের জনক জাকির ছেলে সোহেল রানা (১১) ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে জেসমিন আক্তার (৭)। আমার পুলাই পান (ছেলেমেয়ে) না খাইয়া মরতাছে। এমন কথা বলে অঝড়ো কাঁদছিল জাকির হোসেন স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। তিনি আরও বলেন, যারা আমার স্বামীকে এভাবে আহত করেছে আমি তাদের বিচার চাই ।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চা-স্টলে বসা নিয়ে কথা কাটা কাটিকে কেন্দ্র করে বাদল মিয়ার নির্দেশে সোহাগ মিয়ার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতে করে জাকির হোসেনের ডান হাতে। আর সেই আঘাতের ১৪ দিন পর চিকিৎসাধীণ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে জাকির হোসেনের ডান হাত কেটে ফেলতে হয়। আঘাতের কারণে ডাক্তারের পরামর্শে এক হাত কেটে ফেলতে হয় জাকির হোসেনের। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে চিকিৎসকের পরামর্শে বে-সরকারি একটি হাসপাতালে তার এই হাত কনুইয়ের উপর পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। জাকির হোসেন উপজেলার পলাশতলী (জলপাইতলা) গ্রামের মোকছেদ আলীর বড় ছেলে। জাকির পেশায় ভ্যান রিকশার মিস্ত্ররী।
জাকিরের মা জামেলা খাতুন বলেন, আমার ছোট ছেলে আলী হোসেন বিদেশে থাকে, ছেলের বউ নিলুফা ইয়াসমিন আমাদের বাড়িতে থাকে। বেশ কিছুদিন যাবত কাশেম আলী’র ছেলে বাদল মিয়া রাতের বেলা আমাদের বাড়ি আশেপাশে ঘুরাফেরা ও উকিঝুকি মারে গভীর রাতে হলে মাদক সেবন করে ঘরে দরজার ফাঁক দিয়ে ডাকাডাকি করে। আমার বড় ছেলে জাকির হোসেন এর প্রতিবাদ করায় বাদল বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে তোর ছেলে জাকির হোসেনের হাতটা কেটে ফেলব।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর)উপজেলার পলাশতলী বাজার চৌরাস্তা মোড়ে চা দোকানে বসা কেন্দ্র করে আঃ বারেকের ছেলে সোহাগ মিয়া (২৫), কাশেম ছেলে বাদল মিয়া (৩০) সহ তার লোকজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ধাড়ালো অস্ত্রের আঘাতে জাকির হোসেনের ডান হাতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঐদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করেন। তার অবস্থায় আশষ্কাজন দেখা দিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় একটি বে-সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে অপারেশনের মাধ্যমে তার ডান হাত কেটে ফেলা হয়। প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনায় আহতের মা জামেলা খাতুন বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে ফুলবাড়ীয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, ৬ বছর আগে ময়মনসিংহে গিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন জাকির হোসেন । গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী সুফিয়া খাতুন ছেলে সোহেল রানা ও মেয়ে জেসমিন আক্তার থাকতেন । রিকশা চালিয়ে চলতো সংসার। ৪ বছর আগের বাড়ি থেকে পলাশতলী বাজার রিকশা নিয়ে আসা সময় এক্সিডেন্ট হয়ে বাম পা ভেঙ্গে ফেলেন। এরপর জীবন জিবিকার তাগিতে রিক্্রা সাইকেলের গ্যারেজ দেন।