মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১১ ঘন্টা নিখোঁজ থাকার পর আবুল খায়ের (৩১) নামে এক মিনি টমটম চালকের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট চা বাগানের ১১ নং সেকশন এলাকা থেকে চালকের মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
খুন হওয়া আবুল খায়ের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের গাজিপুর এলাকার মৃত মোঃ আনছর আলী ছেলে।
আবুল খায়েরের বড় বোন ইয়াসমিন জানান, গতকাল রাত ১১টা থেকে আবুল খায়েরকে পাওয়া যাচ্ছে বলে গতকাল রাত ৩টায় খবর পান তারা। পরে ভোররাত পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা কালিঘাট রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গা খোঁজ নেন। সকাল পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পেয়ে আজ সোমবার সকাল দশটায় শ্রীমঙ্গল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে ডিউটিরত পুলিশ তখন জিডি নানা নিয়ে বেলা ১২টার পর আসতে বলেন।
আবুল খায়ের শ্রীমঙ্গল শহরতলীর রামনগর এলাকায় প্রবাসী আব্দুল হান্নানের বাসায় থাকতেন। গত চার মাস আগে আবুল খায়েরের বাবা স্ট্রোকে মারা যান। এরপর থেকে খায়েরের পরিবারের নেমে আসে দুঃখ দুর্দশা। পাঁচ বছরের এক মেয়ে, দশ মাসের এক ছেলে এবং মা-বোন নিয়ে খায়েরের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ছিল। তার পরিবারের এ দুরবস্থা দেখে প্রবাসী হান্নান আবুল খায়ের এর জীবিকা নির্বাহ করে পরিবার চালানোর জন্য এক মাস আগে একটি মিনি টমটম কিনে দেন। আবুল খায়ের ওই টমটম চালিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতেন। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানোর হতাশা ঘিরে ধরেছে নিহতের পরিবারকে।
নিহত আবুল খায়েরের বোন ইয়াসমিন বলেন, আমার ভাইকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঘাতকরা হত্যা করেছে। আমাদের পরিবারের আয়ের তেমন কেউ নেই। ছোট ভাই যা আয় করত তা দিয়েই পরিবার চলতো। আমরা আমার ভাইয়ের খুনের সাথে জড়িত সবার উপযুক্ত বিচার চাই। নিহতের স্ত্রী সুমনা আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই। পুলিশ তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনুক।
ছেলে হারিয়ে মা খোদেজা আক্তার বিলাপ করে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব? আমার নাতি-নাতনিরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদের এখন কে দেখবে? কারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করলো! আল্লাহ ওদের মাফ করবে না। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আমি আর কিছু চাই না।
শ্রীমঙ্গল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, টমটম চালকের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার পাঠিয়েছি। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।