ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাই এখন লাপাত্তা। দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর ছাড়াও কোনো পর্যায়ের নেতাদেরই খোঁজ মিলছে না। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন প্রায় সব পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা।
পাশাপাশি দ্বীপ উপজেলা কক্সবাজারের মহেশখালীতে তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরাও বন্ধ রেখেছেন মোবাইল নম্বর। বেশির ভাগ নেতা দেশে পরিচিতজন কিংবা স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের মত মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ রাজনীতির দৃশ্যপটে নেই তিন দশক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা দাপুটে রাজনৈতিক নেতারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকসহ অধিকাংশ পদবীধারী রাজনৈতিক নেতা চলে গেছেন আত্মগোপনে। তবে মহেশখালীতে বিভিন্ন হত্যার আসামিসহ আওয়ামীলীগের কোন নেতা গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্ঠার কাছে এসব নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার অনেকে। পুলিশ এ পর্যন্ত কোন আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদের কোন নেতাকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পুলিশের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে গণ বিপ্লবে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা। যে কোন কিছুর মূল্য তাদের গ্রেপ্তারের দাবী জানান।
জানা গেছে, কিছুদিন আগেও যেসব জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের বিশাল সিন্ডিকেট মাঠে সক্রিয় ছিল,হাল ধরে ছিল মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সোনাপাড়া এসপিএম প্রকল্প কেন্দ্রীক ব্যবসা, প্যারাবন নিধন করে মৎস্য প্রকল্প, বালি ব্যবসাসহ অর্থনৈতিক জোনসমুহে তারা আজ দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ তানভীর ছিদ্দিকী হত্যার আসামী তারেক চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজান, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল করিম,যুগ্ম সম্পাদক শেখ কামালসহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগ,শ্রমিকলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কথিত ত্যাগী নেতাদের এখন আর জনগনের পাশে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তাদের ত্যাগের গৌরব প্রচারে দীর্ঘ বছর মুখরিত ছিল তাদেরই একশ্রেনীর পদলেহনকারিরা। তবে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে উদ্দিন মাসুদ গেল শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করেছে প্রকাশ্য এসেছে। তার কোন আচঁড় লাগেনি হাসিনা সরকারের পরও এমনটি বলছেন অনেকে।
ইতিমধ্যেই এই জনপদে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও সহাবস্থান ফিরে এলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সাথে সাথে বিএনপির খোলসে অনেক পাতি নেতা উপ-নেতা চরম দাপট প্রদর্শণ করে দখল বানিজ্য ও ত্রাস চালিয়েছে এখানকার বিভিন্ন জনপদে। সময়ের পরিক্রমায় তাদের অপকর্ম ফিকে হয়ে এলেও বালি মহল ও প্রকল্প কেন্দ্রীক ব্যবসা হাতিয়ে নেওয়ার মিছিলে তারা এখনো সক্রিয় এবং আপোষহীন।
জানা গেছে, দ্বীপ উপজেলার মহেশখালীতে এখানকার আওয়ামীগ রাজনীতি চলে যায় একশ্রেনীর সদ্য গজানো তরুণ আওয়ামী লীগের হাতে। যারা নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠাতা পরিবারগুলোর প্রতি কাঁচি চালাতে থাকে।তাদেরকে পদ পদবি, জনপ্রতিনিধির আসন থেকে বঞ্চিত রেখে রামরাজত্ব কায়েম করতে থাকে।
ফলে, বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অনুসারিরা বিশেষ করে, এই জনপদে দলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারগুলো এদের হাতে নিগৃহীত হতে থাকে। অনেকেই দলের মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়তে বাধ্য হয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে থাকা সদ্য গজানো দলিয় কথিত নেতাদের নানা কারসাজি ও ষড়যন্ত্রের কাছে। এতে দলের মূল পদবী থেকে চিটকে পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খাইরুল্লাহ চৌধুরীর পুত্র ত্যাগি নেতা সেলিম চৌধুরীর মত অনেকে।
যেসব নেতারা ৩ দশক ধরে কথিত জনসেবক সেজে নানা অপকর্ম করে গেছে এবং নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল, তারা আজ জনসেবা ছেড়ে আত্মগোপনে। সেইসব জনসেবকদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আজ।
একমাত্র উপজেলার মাতারবাড়ীতে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে। আর প্রকৃত দলপ্রেমিক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিবারগুলো দলিয় বিপর্যয়ের সামনেও আত্মগোপনে না থেকে প্রকাশ্যে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
বিশেষ করে এই জনপদটি আওয়ামী অধ্যূষিত হওয়ায় দলটির যেসব ক্লীন ইমেজের ব্যক্তি এতদিন দলের মূলস্রোত ও শীর্ষ পদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা দলিয় প্রতিক না পেলেও ব্যক্তি ইমেজের কারনে সাফল্যের পথে হাঁটবেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
অপরদিকে আত্মগোপনে থাকা নেতারা তিনদশক ধরে যে কারচুপি,আধিপত্য,প্রশাসনকে ব্যবহার করে ফলাফল পাল্টে দেওয়ার নিঠুর পরিহাসে জড়িত ছিল বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের সেই কারিশমা কোন কাজে আসবে না।এমনকি তারা নিজেরাও নির্বাচন করতে পারবেন।জনগনের সামনে এসে ভোট চাওয়ার মুখও তাদের থাকবে না।কারন দলিয় সরকারের পতনের পর বিপর্যের সময় তারা আত্মগোপনে ছিল। জনগনের পাশে তাদেরকে দেখা যায়নি। আবার নিজেদের অপকর্মের কারনে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাবেন এবং জেলের প্রকোষ্ঠে বন্দিও থাকতে হতে পারে।
আর এ কারনেই এখানকার বঞ্চিত জনগ্রহনযোগ্য সৎ নেতৃত্ব ফেয়ার ফ্রি নির্বাচন হলে প্রথম সাফল্যের বেলাভূমিতে পা রাখতে সক্ষম হবেন।এলাকার উন্নয়নে তারা বিশেষ অবদানও রাখতে পারবেন।এরা কখনোই জড়াবেন না বহুল আলোচিত বালি, প্রকল্প কেন্দ্রীক ব্যবসায়।দল ফিরে যাবে তার সত্যিকারের আপন ঠিকানায়। স্বস্তি, শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে এই জনপদে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ কাইছার হামিদ বলেন, আওয়ামীলীগসহ সকল অপরাধী গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ভাল সংবাদ পাবেন।