ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়। গত দুইদিনে বৃষ্টি কমার কারনে পানি নামতে শুরু করলেও কমেনি প্লাবিত গ্রামের মানুষের কষ্ট, নদী পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) যা বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। এদিকে একই সময়ে নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) এই পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ (সোমবার) সকালে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে গত শুক্রবার থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। শনিবার রাত ১১টার পর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি প্রবাহ। একই সময়ে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে তিস্তার চরাঞ্চল ও বাম তীরের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ডুবে যায় কৃষকের ফসল, ভেসে যায় পুকুরের মাছ। শনিবার রাত থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রোববার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে গেলেও নতুন করে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেশ্বর চর এলাকার ওসমান গনি বলেন, শুক্রবার থেকে হঠাৎ উজানের পানি আসতে থাকে। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার রাত থেকে পানি হু-হু করে বাড়ে। তবে এখন কমতে শুরু করেছে।
একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের আজিজার মিয়া বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন কমতে শুরু করেছে। এতে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর আমাদের ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। এবারও চলে যাবে হয়ত। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছিল। তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।