ছবিঃ আবুল হাসনাত অপু
আখাউড়ায় বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলার সর্বত্র দেখা দিয়েছে নানা রোগবালাই। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সর্দি ও জ্বরসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। গত এক সপ্তাহে অন্তত শতাধিক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ শতাধিক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ভর্তিসহ চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এসব রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, নারী ও বয়স্ক রয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বন্যাপরবর্তী সময়ে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেয়। এ সময়টায় অবশ্যই প্রচুর বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে হবে। ব্যবহারিক জিনিসপত্র ও কাপড় বন্যার পানিতে না ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যতটা সম্ভব বন্যার পানি এড়িয়ে চলা। এতে পানিবাহিত নানা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর পরিমাণ রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ হলো ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সর্দি ও জ্বর, পানিবাহিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত।
গত সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪শ রোগী। আগত রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা সেবা পেয়ে তারা খুবই খুশি। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। এদিকে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার মোগড়া এলাকার গৃহিণী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, গত দুই দিন ধরে আমার ১৮ মাস বছর বয়সী মেয়ে সুমি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু এরপর কোনো উন্নত না হওয়ায় পরে তাকে সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক দেখে তাকে ভর্তি করার জন্য বলে। ভর্তির পর এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখা যাচ্ছে।
এক রোগীর বাবা মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে ফারজানা আক্তার গতকাল বিকেল থেকে হঠাৎ তার পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে রাতে শুরু হয় পাতলাপায়খানা। সকালে অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন। উপজেলার আদমপুর এলাকার খোরশেদ মিয়া বলেন, আমার ছেলে রনি গতকাল থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা করছে। পলী চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া হয়। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। কোনো কিছু খেতে চাই না। তাই সকালে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় হওয়ায় অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
গৃহিণী আকলিমা আক্তার বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত আমার ছেলে রাফি শরীরের বেশির ভাগ জায়গাতে ঘামাছির মতো কী যেন বের হয়েছে। এগুলো সারাক্ষণ চুলকায়। চুলকালে শরীর লালচে হয়ে যায়। তাছাড়া চুলকানোর জন্য ছেলেটা কান্নাকাটি করে। অনেক সময় চুলকিয়ে দিতে গিয়ে নখ লেগে রক্ত বের হয়ে যায়। ফার্মেসি থেকে ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো উপকার না পেয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে আসা। চিকিৎসক বলেছেন বন্যার পানির কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি ওষুধ নিয়ম করে সেবন করতে বলেন। পৌর শহরের দুর্গাপুর এলাকার গৃহিণী ফরিদা বেগম বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ আমার ছেলে সোহাগ পেটের ব্যথা শুরু হয়। সারা রাত ব্যথায় সে অনেক কষ্ট করে। তাই সকালে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা।
মো. বাবুল মিয়া বলেন, আমার বাবা গত তিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগছেন। সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক দেখে তাকে ভর্তি দেন। এখন বেশ ভালো আছে।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. লুৎফর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় নানা রোগ তুলনামূলকভাবে বাড়ছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, কাশি, চর্মরোগ পানিবাহিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিকের ওপর নানা বয়সী রোগী এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসাপত্রের সঙ্গে জরুরি ওষুধও বিনামূল্যে দিচ্ছি। আমাদের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের কোনো সংকট নেই। রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা যদি স্বাস্থ্য সচেতন হই তাহলে রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh