× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হমক্রী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাঁদা তুলে বর্গা শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের অভিযোগ

উবাসিং মারমা, রুমা (বান্দরবান) প্রতিনিধি।

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৩ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

বেশি ফাকি দেওয়া হয়েছে বলে মনে হলে পালা করে বিদ্যালয়ে যান দৈনিক একজন করে । ভেশিরভাগ সময়ই যাননা কোনো শিক্ষক। তখন বন্ধ থাকে বিদ্যালয়। পাঠ গ্রহন থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় অত্যন্ত দরিদ্র এবং সুবিধা বঞ্চিত পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এ বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেনি কোন শিশু, বেশির ভাগ শিশুই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষকদের অবহেলায়।

বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নের হমক্রী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাস্তব চিত্র এটি। সদর থেকে পূর্ব দিকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টির অবস্থান। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইউএনডিপি স্কুল নামে পরিচিত বান্দরবানের রুমায় ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৭ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি  জাতীয়করণের ঘোষনা করে সরকার। তার মধ্যে রুমা সদর ইউনিয়নের হুমক্রী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও একটি। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে আরো দুইজন শিক্ষকের পদায়ন হলে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট পাঁচজন। 

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি সিংওয়াই ম্রো বলেছেন শিক্ষিকাসহ দুইজন শিক্ষক বান্দরবান থেকে এসেছেন। জানুয়ারি মাস থেকে সেখানে বদলী এসে প্রথম দিকে দুই একদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারপর হতে তাদের আর কোনো হদিস নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান জেলা সদর থেকে আসা এই দুই শিক্ষকের নাম হ্লানুচিং খেয়াং ও অংক্যজাই খেয়াং। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রুমা বাজারে একটি দোকানে এ প্রতিবেদক কথা বলেন শিক্ষক 
অংক্যজাই খেয়াং এর সঙ্গে। ‌ তিনি বলেছেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর জানুয়ারি মাসে হুমক্রী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার সাথে হ্লানুচিং খেয়াংও যোগদান করেন। তবে তারা কর্মস্থলে যে পারেন না তাই তারা চারজন শিক্ষক মিলে বর্গা (ভাড়া) শিক্ষক রেখেছেন। মুঠোফোনে কল করা হলে বান্দরবান সদরে তার অবস্থান জানিয়ে শিক্ষক হ্লানুচিং খেয়াং বলেন, তিনি নিয়মিত পাঠদান করেন। বৃহস্পতিবার (১২সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন কিন্তু নদীতে পানি বেশি থাকায় যেতে পারেননি তাই বান্দরবান চলে এসেছেন বলে জানালেন শিক্ষক হ্লানুচিং খেয়াং। তবে স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি সিংওয়াই ম্রো বলেন, রুমা বাজার হতে স্কুলে আসতে কোনো নদী পাড় হতে হয়না। তার ভাষ্যমতে, পাড়ার শিশুদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষক হ্লানুচিং খেয়াংকে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মোবাইলে কল করে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে অনুরোধ জানানো হয়। ওইসময় বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা না বলে শিক্ষক হ্লানুচিং খেয়াং সব শিক্ষক মিলে মাসে ১০ হাজার টাকায় বর্গা শিক্ষক রাখার কথা জানিয়েছেন বলে জানালেন সিংওয়াই ম্রো। তিনি বলেন বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসায় শিক্ষক হ্লানুচিং খেয়াংকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেও চিনেন না।

রিংতুই পাড়ার বাসিন্দা বর্গা শিক্ষক মেনপ্রে ম্রো (২৩) বলেছেন, তাদের পাড়ার বিদ্যালয়ে নিয়োজিত লালরামলিয়ান বম, মংসাথোয়াই মারমা, হ্লানুচিং খেয়াং ও অংক্যজাই খেয়াং এই চার শিক্ষক মিলে তাকে (মেনপ্রে ম্রো) এবং পায়া ম্রোকে বর্গা শিক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা দুইজন মাসে সাত হাজার টাকায় ছেলে মেয়েদের পড়িয়েছেন। চারজন  সরকারি শিক্ষক প্রতিজনের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে মাসে ১৪ হাজার টাকা করে গত মার্চ মাস থেকে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত এই দুই বর্গা শিক্ষকের পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা প্রদান করেছেন উক্ত শিক্ষকগণ। তবে আগস্ট মাস থেকে তারা দুইজন আর বর্গা শিক্ষকের কাজ করছেন না বলে জানিয়েছেন মেনপ্রে ম্রো।

শিক্ষকদের এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অমানবিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষকদের এমন সীমাহীন অনিয়মের কারণে দুর্গম এলাকার সুবিধাবঞ্চিত বেশিরভাগ শিশুরা পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারছে না, ফলে ঝড়ে পড়ার হার কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ের অবকাঠামো এবং শিক্ষকদের মাসে মাসে বেতন দিয়ে রাষ্ট্রের তথা জনগণের টাকা খরচ করে শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হলে এ দায়ভার নিবে কে?

এই বিষয় উপজেলা শিক্ষক কর্মকর্তা আশীষ কুমার ধর, রুমার দিকে আসার পথে উল্লেখ করে মোবাইলে বলেন, তদন্ত করে দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.