× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শিশু পরিবারে দুর্নীতির অভিযোগ; সংশ্লিষ্টদের বিভাগীয় ব্যবস্থার নেওয়ার সুপারিশ

মোহাম্মদ ইমদাদুল হক মিলন, মাদারীপুর প্রতিনিধি।

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৭ পিএম

ছবিঃ মোহাম্মদ ইমদাদুল হক মিলন

মাদারীপুরে সরকারি শিশু পরিবার নিবাসীদের নিন্মমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদ করলে করা হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ভর্তি বহিতে ৬০ জন থাকলেও বাস্তবে নেই অর্ধেক শিশুও। এতিমদের নামে বরাদ্দের সরকারি টাকা ১৫ বছর ধরে একই ঠিকাদারের জোগসাজশে নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা সমাজসেবা অফিস।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অত্যাচার-নির্যাতন আর নিন্মমানের খাবার দেয়ায় আবাসিক হোস্টেল ছাড়তে জিনিসপত্র নিয়ে একে একে বেড়িয়ে আসছে এতিম শিশুরা। তাদের ফেরাতে গেলে তোপের মুখে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ২০০৪ সালে ১০০ এতিম থাকার জন্য মাদারীপুরের মধ্য খাগদী এলাকায় গড়ে ওঠে মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবার। খাতায় ৬০ জন শিশু ভর্তি দেখানো হলে বাস্তবে আছে মাত্র ২৭ জন। মা-বাবা হারা এতিমদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন মাংসসহ প্রতিদিন আমিষ খাবার বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু ফ্রিজ ভর্তি মাছ-মাংস থাকলেও ভাল খাবার জোটেনা অসহায়দের। দেয়া হয় পঁচা ও নিন্মমানের খাবার। যা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে অনেক শিশু। এছাড়া নতুন পোশাক বরাদ্দ থাকলেও তার অর্থ চলে যায় দুর্নীতিবাজদের পকেটে। এ নিয়ে বার বার অভিযোগ জানিয়েও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে শিশুদের।

সূত্র বলছে, মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ১১ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এতিম শিশুর জন্য জনপ্রতি মাসে খাবারের বরাদ্দ ৩ হাজার টাকা। শিক্ষা সামগ্রীতে ৩৫০ টাকা, পোষাক ৩০০ টাকা, প্রসাধনী ১৫০ টাকা, চিকিৎসার জন্য ১০০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। দীর্ঘদিন ধরে উত্তম কুমার পোদ্দার ও ভরত চন্দ্র ঘোষ নামে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী, পোশাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবারহ করে আসছে। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও উপতত্ত্বাবধায়ক মো.সাইদুজ্জামান, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান, বড় ভাইয়া ফজলুল হক বেপারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আখি খান, এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিশু জানায়, অনেকদিন হলে তারা ভালমানের খাবার খেতে পারে না। ফ্রিজ ভর্তি মাছ-মাংস থাকলেও শিশুদের রান্না করে খেতে দেয়া হয় না। উর্দ্ধতন কোন কর্মকর্তা আসলে তখন, তাদের দেখানোর জন্য ওইদিন উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া বছরে দুটি ঈদ আসলেও নতুন পোষাক দেয়া হয় না। এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও বার বার আকুতি জানিয়েও কোন সমাধান হচ্ছে না।

মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আখি খান বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আমার বিরুদ্ধে কোন শিশুই অভিযোগ দিতে পারবে না। আমি এমন কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত নই। এখানকার প্রত্যেক শিশুকে আদর-মমতা দিয়ে ভালবাসি।

মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর বড় ভাইয়া ফজলুল হক বেপারী বলেন, এখানে একেকজন এক একটি বিষয়ে দেখাশুনা করেন। পুরো অভিযোগ একজনের বিরুদ্ধে বলা ঠিক না। আমি তো আর প্রতিষ্ঠান প্রধান নই, প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে অবগত ছাড়া কোন কাজই হয় না। কিছু জানার ইচ্ছা থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে যোগাযোগ করেন। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়।

মাদারীপুর সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর উপতত্ত¡বধায়ক মো. সাইদুজ্জামান বলেন, শিশুদের নিন্মমানের খাবার দেয়া হয় এটি সত্য নয়। তাদের মারধর বা তাদের সাথে খাবার আচরণ করা হয় সেটিও সত্য নয়। এখানকার এতিমদের সাথে প্রতিষ্ঠানের সবাই সুন্দর ও ভাল ব্যবহার করে। তাদেরকে ভালমানের খাবার দেয়া হয়। খাবারের মেন্যু করা আছে, ঠিকাদার সেইভাবেই খাবার সরবরাহ করেন। একটি চক্র প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এমন করছে।

ঠিকাদার উত্তম কুমার পোদ্দার বলেন, সরকারিভাবে যেভাবে তালিকা করা আছে, সেভাবে খাবারসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এখানে কোনকিছু কম দেয়ার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি বেশি দেয়ারও সুযোগ নেই। আর দরপত্র আহবান করা হলে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই খাবারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহের অনুমতি দেয় সরকার। এককভাবে টেন্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।

মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন সরকার বলেন, অভিযোগ আসলে সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এতিম শিশুদের এমন খাবার দেয়া খুবই অন্যায়। তাদের সাথে যে আচরণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা করেন সেটা শোভা পায় না। শিশুদের লিখিত জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পরে সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.