× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

‘আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিলো, কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি’

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী।

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৬ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নীলফামারীর সন্তান আব্দুর রউফ (২৭)। তার মৃত্যুতে একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শোকে মুহ্যমান তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। শোক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশীদের মাঝেও।

ঢাকার উত্তরায় গত ১৮ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যান রউফ। পরদিন দুপুর ১১টার দিকে নিজ জেলা নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের দোনদরী মাঝাপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে আব্দুর রউফের দাফন সম্পন্ন হয়।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এক মাসের অধিক সময় পার হলেও স্বজন হারোনোর শোক কাটেনি বাড়িটি থেকে। আর সেই শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে গোটা গ্রামে।

রউফ ওই গ্রামের ইউনূছ আলী (৫৮) ও সুলতানা বেগম (৫০) দম্পতির ছেলে। বাবা ইউনূছ আলী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। পরিবারে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আব্দুর রউফ সবার বড়। তার আয়ে পরিবার ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা চলে। বিয়ে হয়েছে বোন রিমু আক্তারের (২২)। সবার ছোটভাই সাকিব হাসান (২০) এইচএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন।

ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ ও পরিবারের অভাব মেটাতে আব্দুর রউফ বেছে নেন গাড়ি চালকের কাজ। এজন্য তিনি ঢাকার উত্তরায় থাকতেন। ছেলে হারানোর শোকে রউফের বাবা-মা এখন দিশাহারা, চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

রউফের মা সুলতানা বেগম বলেন, বাবা যেদিন মারা গেছে তার আগের দিন রাতে কথা হয়েছে। বাবার সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো। সেদিন দুপুরেও মুঠোফোনে ছেলের সঙ্গে পরিবারের সবার কথা হয়েছিল। শুধু আমার সঙ্গে কথা হয়নি। ছেলেটি আমার সম্পদ ছিল। পরিবারে অভাবের কারণে সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকায় কয়েক বছর থেকে চাকরি করছিল। তার টাকা দিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে দিছি, আবার ছোট ছেলেটিকে পড়ালেখা করাই।

সুলতানা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে সম্পদ ছিল, আমার সন্তানকে কেউ কি ফেরত দিতে পারবে? আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অসুস্থ। প্রতিমাসে আমাদের ওষুধ খেতে ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। ছেলে মারা যাওয়ার পর এখন পরিবার নিয়ে চলবো কীভাবে। আমার চাওয়া ছেলেকে যারা এভাবে মারছে তাদের বিচার যাতে হয়। ছোট ছেলের জন্য সরকার যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে।

নিহত রউফের বাবা ইউনূছ আলী বলেন, দিনমজুর হওয়ার কারণে ছেলেকে বেশি পড়ালেখা করাতে পারিনি। সংসারে অভাবে থাকায় সে ঢাকায় গাড়ি চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতো। মেয়েটিকে বিয়ে দিছে সে, ছোট ছেলেটিকে পড়ালেখা করিয়েছে। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতো। সেই টাকা দিয়ে আমার পরিবার চলতো। ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে আমার সব স্বপ্ন মরে গেছে। তাকে ছাড়া আমি এখন বাঁচবো কীভাবে? আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিলো, কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।

রউফের ছোট ভাই সাকিব বলেন, গত ১৮ জুলাই দুপুরে মুঠোফোনে ভাইয়ের সঙ্গে (রউফ) আমার কথা হয়েছিল। তিনি পরিবারের সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আমাকে সতর্ক করেছিলেন। এরপর সন্ধ্যায় নিজেই হারিয়ে গেলেন আন্দোলন বিরোধীদের গুলিতে। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নীলফামারী সদর কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী জানান, ওই ছেলে এলাকায় সহজ সরল হিসেবে পরিচিত ছিল। সে ঢাকার উত্তরায় একটি প্রাইভেটকার চালাতো। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকাতেই মারা যায়। তার বাবা মা দুজনই অসুস্থ, তার একটি ছোট ভাই রয়েছে। পরিবারটিতে একমাত্র উপার্জনকারী ছিল সে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.