ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দলটির নেতা কর্মীরা দ্বীধাভিভক্ত হয়ে পড়েছে। কমিটি ঘোষনার পরপরই পদ পদবী বঞ্চিতরা নব গঠিত কমিটির বিরোধিতা করে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে ।
সূত্রে প্রকাশ,ডুমুরিয়া উপজেলা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আহবায়ক মোল্যা মোশাররফ হোসেন মফিজ ও সদস্য সচিব সরদার আব্দুল মালেক স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্য সন্মেলনের আহবান করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ই আগষ্ট থেকে সন্মেলন শুরু হয় এবং ২১ই আগষ্ট ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের সন্মেলন শেষ হয়। গত ২০ই আগষ্ট ছিল আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সন্মেলন।
উক্ত সম্মেলনে এম এ সালাম কে সভাপতি ও আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন কে সাধারণ সম্পাদক করে আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ঘোষনা করা হয়। কমিটি ঘোষনার পরপরই কমিটির বিরোধিতা করে আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার দৌলত হোসেন এর নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয় চুকনগরে। মিছিলটি বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষীণ করে বাদামতলা মোড়ে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা সরদার দৌলত হোসেন,যুবদল নেতা সরদার বেল্লাল হোসেন,মোঃ আব্দুল মালেক ও সরদার মাহবুবুর রহমান প্রমূখ।
ডুমুরিয়া উপজেলার রাজনৈতিক প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর। আর সেই আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে এমন পরিবর্তনে ইউনিয়নের ত্যাগী নেতা কর্মীদের ভীতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক ত্যাগী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছে নবগঠিত কমিটিতে চুকনগরের নেতাদের মাইনাস করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন ৯০ দশকের আগে আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপিকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন মরহুম সরদার রুহুল আমীন, মরহুম সিরাজ উদ্দীন মোড়ল,মরহুম এম এম সাহাবুদ্দিন,শেখ বদরুজ্জামান তছলিম,শেখ শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক আতিকুর রহমান, মাষ্টার স ম আব্দুর রাজ্জাক,মাষ্টার আজিজুর রহমান,শাহিনুর রহমান সহ অনেকে আর ৯০ দশকের পর থেকে আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপিকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন এম এ সালাম, বি এম হাবিবুর রহমান হবি,সরদার দৌলত হোসেন, কবির হাসান ডবলু,মোঃ আমিনুর রহমান মোড়ল,কামাল হোসেন,আমিনুর রহমান বুলবুল,দেবব্রত রায়,রমেন রায় সহ অনেকে। এরা দলের দূরদিনে দলের কর্মিদের পাশে থেকে বিএনপি কে সুসংগঠিত করে রেখেছিলেন। দলকে টিকিয়ে রাখতে অনেক হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। জেল খেটেছেন অসংখ্যবার। ঘরের চালেরতলে ঘুমাতে পারেননি দিনের পর দিন,মাসের পর মাস। অথচ নব গঠিত কমিটিতে এদের স্থান নেই। উপজেলা বিএনপি এ সকল নির্যাতিত নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে।
অনেকে বলেছেন নবগঠিত কমিটি উপজেলা বিএনপির পকেট কমিটি। রাজপথের শহীদ জিয়ার আদর্শের লড়াকু সৈনিক সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান বিএনপি নেতা বি এম হাবিবুর রহমান হবি বলেন,স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরপরই দেখা যাচ্ছে চুকনগর সহ সমগ্র ডুমুরিয়ায় অনেক নব্য নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। এদেরকে আগে কখনো দল করতে দেখিনি। দল করা দূরের কথা, দলের নাম উচ্চারণ করতেও শোনা যায়নি। আমরা দলের জন্য অসংখ্য মামলা খেয়েছি,জেল খেটেছি,বাড়ি ছাড়া হয়েছি। নিজের পৈতৃক জমি বিক্রি করে মামলা চালিয়েছি, দলের পিছনে ব্যায় করেছি। দল করতে যেয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি তবুও শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য ছুটে চলেছি। তিনি আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে চুকনগর কেন্দ্রীক কোন বড় পদ না থাকায় হতাশ হয়েছেন। তিনি দলের জন্য নির্যাতিত,নিপিড়ীত, শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণকারী রাজপথের রাজনৈতিক সৈনিকদের সমগ্র উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং নব্য বিএনপি ও হাইব্রীট নেতাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য উপজেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
বিএনপি নেতা কবির হাসান ডবলু বলেন,আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটির ঘোষনা শুনে আমি হতাশ হয়েছি। ৯০ দশকের পর থেকে যারা চুকনগরে বিএনপি করতো তাদেরকে নবগঠিত কমিটিতে রাখা হয়নি। আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার দৌলত হোসেন অতি আক্ষেপের সহিত বলেন,আমার পরিবার শহীদ জিয়ার আদর্শের পরিবার। আমি কোনদিন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বা দল থেকে ডিগবাজি দেইনি। দলের দূর দিনে দলের হাল ধরে রেখেছিলাম। দলের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছিলাম। দল করতে যেয়ে অনেক হামলার শিকার হয়েছি,মামলা খেয়েছি,জেল খেটেছি । অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি দলের জন্য অথচ আমাকে নবগঠিত কমিটিতে সম্মানজনক কোন পদেই রাখা হয়নি। এমনকি দলের সন্মেলনেও আমাকে ডাকা হয়নি। উপজেলা বিএনপি আমাকে অবমূল্যায়ন করেছে,আমার প্রতি অবিচার করেছে।
সরদার দৌলত হোসেন আরও বলেন, আটলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে যাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তারা ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এর আর্শিবাদপুষ্ট। তার আর্শিবাদে একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর একজন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের প্রতক্ষ ইশারা এদের প্রতি থাকায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রতাপ রায় পরাজিত হয়। এদের পক্ষে নির্বাচন করতে যেয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বহিষ্কার হয়েছিলেন। এরা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সাথে শান্তি চুক্তিতে ছিলেন। একারণে তারা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে এলাকায় কোন দলীয় সভা সমাবেশে অংশ নেয়নি বা আয়োজন করেনি। এরা উপজেলা, জেলার প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নেতাদের আই ওয়াশ করেছে। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপি নেতারা আওয়ামী মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ সহ তার অনুসারীদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাকে নবগঠিত কমিটিতে রাখা হয়নি। কমিটিতে রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এর আর্শিবাদপুষ্টদের।