কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে অন্তত মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকশ পরিবারের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অঝোরে বৃষ্টির কারণে মাতারবাড়ী পশ্চিমে বেড়িবাঁধে সাগরের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বলতে গেলে উপজেলার মাতারবাড়ীতে বৃষ্টি ও লোনাজলে জলাবদ্ধতার শিকার কয়েকশ পরিবার। দেখার যেন কেউ নাই জলবদ্ধতা যেন ললাট লিখন তাদের।
উপজেলার মাতারবাড়ীর পশ্চিমে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য চলছে জরিপ কাজ শেষের পথে তাপ ভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও । সব মিলিয়ে মাতারবাড়ী হতে যাচ্ছে মিনি সিঙ্গাপুর । তার পরেও মাতারবাড়ীর মানুষের আর্তনাদে যেন আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে । প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে কাঁন্নার রোল। এ দ্বীপে এত উন্নয়ন তবুও সুখে নেই এ ইউনিয়নের মানুষ গুলো। বর্ষা শুরু হলেই পানির সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয় দ্বীপের অর্ধেক বসতির ।
সাগরের জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জ্বলোচ্ছাসে তলিয়ে গেছে মাতারবাড়ীর দক্ষিণ রাজঘাট , বিল পাড়া , উত্তর সিকদার পাড়া , দক্ষিণ সাইরার ডেইল , সর্দার পাড়া, নতুনবাজার সহ অনেক নিম্নাঞ্চল ।
এদিকে মাতারবাড়ী ইউনিয়নটি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগের তোপের মূখে থাকে প্রতিনিয়ত । বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মাতারবাড়ীর মানুষ গুলো সব চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে । স্থায়ীভাবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করার কারণে বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই ইউনিয়নের মানুষদের । ক্ষতিগ্রস্ত মাতারবাড়ীবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ ও পানি নিষ্কাশনের দাবী দীর্ঘ দিনের হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুলসহ অনেকে ।
জানাগেছে, প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতীতেও এই উপকূলের অনেক মানুষ অকালেই প্রাণ হারায় । মাতারবাড়ীর পশ্চিমের বেঁড়িবাধের উপর বসবাসকারী লোকজন জানান, গেল কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বলোচ্ছাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল মাতারবাড়ীতে , তা এখনো পর্যন্ত পৌষিয়ে উঠতে পারেনি অনেক অসহায় পরিবার । এরই মধ্যে চলতি বছরেও তিন দফা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মাতারবাড়ীতে । পশ্চিমের সাইডপাড়া বসবাসরত অনেক ঘরবাড়ী সাগরে বিলিন হয়ে গেছে । এখনো মাতারবাড়ীর অনেকের ঘুমানোর জন্য নেই কোনো নিরাপদ বাসস্থান । এসব পরিবারে প্রতিনিয়ত দেখা দেয় অভাব অনটন । কিন্তু তার পরেও এ নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই তাদের । সবার আগে স্থায়ী বেড়িবাঁধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন চায় তারা ।
এ ছাড়াও প্রকল্পের জাইকা এবং কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিঃ মাতারবাড়ী ইউনিয়নে পর্যাপ্ত পানি নিস্কাশনে ব্যবস্থা না রাখায় পুরো ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে এমন অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ।
দক্ষিণ রাজঘাট থেকে খন্দারবিল পর্যন্ত জনবসতির মাঝখান দিয়ে যে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে এটি আরেকটি মরণফাদ বলে মনে করেন অনেকে । এই সড়কে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় পুরো বর্ষা জুড়েই জলাবদ্ধতা লেগে থাকেই । এসব স্থানে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে দ্বীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে ইউনিয়নবাসি । অন্যদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার সুযোগ থাকলেও তা দ্রুত আর বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই । ফলে দ্বীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতার আরেকটি কারন বলে জানান স্থানীয়রা । যার ফলে প্রতিনিয়ত মাতারবাড়ীর লোকজন আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ।
জলাবদ্ধতার কারনে মাতারবাড়ীতে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলে জানান স্থানীয়রা । দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেইন এবং কালভার্টের ব্যবস্থা করার দাবী জানান তারা।
মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীকি মারমা জানান, যে স্লুইসগেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা জলবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকরা স্লুইসগেট যেন খুলে দেয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দেখার জন্য বলা হয়েছে।