ভোলার চরফ্যাসনে প্রাচীর তুলে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় তিন পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছয় মাস ধরে পরিবারগুলোর ১৫ সদস্যকে কখনও মই বেয়ে দেয়াল টপকে আবার কখনও হাঁটুসমান পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে এসব পরিবারের অসুস্থ, বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, নারী ও শিশুরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বিষয়টি সুরাহা করে দিতে সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিন গত রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইউএনও অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ১০ বছর আগে জিন্নাগড় ইউনিয়নের উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের আবদুস সালাম মাষ্টারের মেয়ে সাবিনা আক্তারের কাছ থেকে ৪৮ শতাংশ জমি কেনেন জামাল উদ্দিন। সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি সাবিনা আক্তার জমিটি তাঁর কাছে বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। এর জের ধরে ৬ মাস আগে চলাচলের সড়কসহ তাঁর জমির অংশে সীমানাপ্রাচীর তুলে দেন। এতে জামাল উদ্দিনসহ তিন পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। প্রাচীর তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
জামাল উদ্দিন জানান, কেনার সময় দলিলে চলাচলের পথের কথা উল্লেখ করা হয়। এর পরও সাবিনা আক্তার প্রভাব খাটিয়ে সীমানাপ্রাচীর তুলে দেন। এতে তিন পরিবারের চার শিক্ষার্থীসহ ১৫ সদস্যকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গেল বর্ষায় অন্যের জমি দিয়ে হাঁটুসমান পানি ভেঙে যাতায়াত করেছে।
কলেজ শিক্ষার্থী ইমু আক্তার জানান, চলাচলের
পথ বন্ধ থাকায় অন্যের আবাদি জমি দিয়ে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে দিয়ে কলেজে যেতে হয়। এতে পোশাক, বই-খাতা ভিজে যায়। বাধ্য হয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন তিনি। লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখে দিয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী লামিয়া বেগম জানায়, হাঁটুসমান পানি ভেঙে ভুলে যাওয়ার সময় কয়েকবার ডোবায় পড়ে গিয়েছে সে। এ কারণে তিন মাস ধরে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ।
ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, চার সন্তান, স্বামী ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে তারা ৬ মাস বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। অসুস্থ শাশুড়ি শয্যাশায়ী। চলাচলের পথ না থাকায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না।
সাবিনা আক্তার বলেন, আমার জমিতে সীমানাপ্রাচীর দিয়েছি। অন্যরা কীভাবে বাড়ি থেকে বের হবে, সেটা আমার দেখার দায়িত্ব না। দলিলে চলাচলের পথ দেওয়ার কথা লেখা থাকলেও তিনি কেন প্রাচীর দিয়েছেন- এমন প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দু'পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হবে। থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন জানান,অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনারকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ সালেক মুহীত জানান, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।