× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভালুকায় কোটি টাকার কাঁঠালের বাজার

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি।

১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৪৮ পিএম

ছবিঃ ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ভালুকা উপজেলার কাঠাল অঞ্চল হিসেবে খ্যাত হবিরবাড়ি, বাটাজোর, মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এসব এলাকা ছাড়াও ভালুকা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কাঁঠালের বাগান না থাকলেও প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গাছে প্রচুর কাঁঠাল এসেছে।

জাতীয় ফল কাঁঠাল। ফলের রাজা বলে সবার কাছে সমাদৃত। কাঁঠাল শুধুমাত্র একটি মৌসুমী ফলই নয়- সহায়ক খাদ্য ও অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বকীয় গুণাগুনের কারণেই নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ভালুকা উপজেলার সর্বত্র এখন কাঁঠাল গাছগুলিতে ঝুলন্ত কাঁঠালে ছেঁয়ে আছে। কোন কোন বাগানের আগাম জাতের কাঁঠালগুলি পাকতে শুরু করেছে। পাকা কাঠালের মিষ্টি গন্ধে কীট পতঙ্গরা ভিড় করছে গাছে গাছে। আর সেই আনন্দে বাগান মালিকরা গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত।

ভালুকা উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে হবিরবাড়ি ইউনিয়ন বাজারে। হবিরবাড়ি ও বাটাজোর বাজারে সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও হলেও জাতীয় ফল কাঁঠাল বিক্রির জন্য এ বাজারে সপ্তাহে বেশিরদিন হাট বসানো হয়। অন্যদিকে সাপ্তাহিক বাজার ছাড়াও কাঁঠালের প্রচুর আমদানি ও বিক্রি শুরু হয়।

অন্যান্য ফল ও গাছ নিয়ে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় কাঁঠাল নিয়ে তার সিকি ভাগও হয়না। কোন কোন পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় করে। ২ থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম এসময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেনীর লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঁঠালের ভাল হয়েছে। তবে ফলন বেশি হলে দাম না পাওয়ার আশংকাও রয়েছে। কারণ বেশি ফলনে দাম পড়ে যাওয়ার রেওয়াজ আদিকালের। অভাবের কারণে অনেকে কাঁঠালের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। আসবাবপত্র প্রস্তুুতকারী ও ব্যবসায়ী এসব নামমাত্র মূল্যে কিনে ফায়দা লুটছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে গাছগুলো ফলে ফলে ভরে গেছে।

কাঁঠাল কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসেন এ হাটে। এ ছাড়াও গাড়ির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, কাঁঠালের পরিমাণ বেশি হওয়ায় নদীর মাধ্যমে ট্রলারে বোজাই করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে।  

শুক্রবার (২০ মে) সকালে সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী বাজার জুড়ে কাঁঠালের স্তুপ। থরে থরে সাজানো রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য কাঁঠাল। বাতাসে ছড়াচ্ছে কাঁঠালের সু ঘ্রাণ। সকাল হতেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এই কাঁঠাল এনে জড়ো করেন চাষিরা। কাঁঠালের পাইকারি বাজার এটি। বাটাজোর বাজারের শেডঘরে কাঁঠাল, উঠানে কাঁঠাল। বাজারের ছোট-বড় শেডঘর, বাজারের উঠান জুড়ে কাঁঠাল আর কাঁঠাল। শুধু স্তুপ করা কাঁঠালই নয়, কাঁধে করে, মাথায় করে আবার কেউ কেউ রিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসছেন।

কাঁঠালের পাইকার আব্দুল লতিফ ফকির বলেন, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভালুকার কাঁঠালের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের কৃষক হায়দার খান, সাইফুল ইসলাম সাইদুলসহ অনেকেই জানান, চলতি মৌসুমে মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকায় কাঁঠালের ফলন হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কাঁঠালের আকারও গতবারের চেয়ে তুলনামূলক বড়।

উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের কাঁঠাল চাষিরা জানান, সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর তাদের এলাকার লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল পচে-গলে নষ্ট হয়। ফলে তারা বঞ্চিত হন কষ্টার্জিত ওই ফসলের উপযুক্ত মূল্য থেকে। তারা কাঁঠালের উপযুক্ত মূল্য পেতে ভালুকা এলাকায় সরকারি উদ্যোগে কাঁঠাল প্রক্রিয়া জাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চিপস, জুস, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর কারখানা স্থাপনের দাবি জানান।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ভালুকায় প্রায় ২ হাজার ২শ একর জমিতে কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাঁঠাল।
 
ভালুকার কয়েকটি স্থানে কাঁঠালের হাট বসে। এর মধ্যে ভালুকা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ড, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, উথুরা মাহার বাজার, বাটাজোর, কাচিনা, আংগাড়গাড়া বাজার, মল্লিকবাড়ী, পোনাশাইল বাজার, পারুলদিয়া, আশকা ও মাস্টারবাড়ীতে হাট বসে।

প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের গৃহস্থরা ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টেম্পু ও নৌকাবোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এসব হাটে প্রতিদিন হাতবদল হয় লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল।

সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আফজাল হোসেন বলেন, বাটাজোরের সাপ্তাহিক বাজার মঙ্গলবার সহ শুক্রবার দিনও বসে, কিন্তু কাঠালের প্রক্রিয়া করণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় পচে-গলে নষ্ট সহ ন্যায্য দাম কৃষকরা পাচ্ছে না। এছাড়াও বাটাজোর বাজারের রাস্তা-ঘাট নাজুকের কারনে কাঠাল কোন জায়গায় নেওয়া সম্ভবপর হয় না। পালগাও-তামাট সহ বাটাজোরের অনেকাংশ জায়গায় খানা খন্দে ভরপুর, যা পানি নিস্কাশনে অনেক সমস্যা হয়ে যায়। কাঠালের উৎপাদন ভাল কিন্তু বাজার ব্যবস্থা, কাঠালের দাম কম থাকায় কৃষকরা কাঠাল উৎপাদনে আগ্রহ কমিয়ে ফেলছে।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, কাঁঠাল গাছের যত্নের প্রতি কৃষকরা সব সময়ই উদাসীন থাকেন। সময়মতো যত্ন না নেওয়া ও প্রয়োজনীয় সারের অভাবে কাঁঠালের আকার-আকৃতি অনেক সময় ছোট ও বিভিন্ন পোকার আক্রমণ হয়। উপজেলার হবিরবাড়ী ও মল্লিকবাড়ি এলাকায় বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। প্রক্রিয়া জাত করণের জন্য বাড়ি থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনন্সটিটিউট গত বছর বেশ কিছু কৃষক, ব্যবসায়ীদের কে ট্রেনিং এর আওতায় আনা হয়েছিল। আমরা কাঠাল থেকে তেমন কিছু তৈরি না করায়, কাঠাল বেশি উৎপাদনের হওয়ার ফলে এগুলোর দাম কমে যায়, কৃষকরা হতাশ হয়ে না পড়ার জন্য ড্রাই ফুড প্রেসিং এর মাধ্যমে কাঠালের ব্যবহার করা হবে। কাঠালের ড্রাই ফুডের মাধ্যমে মরোব্বা, চিপস, আচার, বাচ্চাদের খাবারের আইটেম সহ বিভিন্ন প্রডাক্ট এর জন্য  কৃষি গবেষণা ইনন্সটিটিউট পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য ফলের মত কাঠালের ড্রাই ফুডের বিভিন্ন প্রডাক্ট তৈরি করা হলে কৃষকদের কাঠাল উৎপাদনে আগ্রহ বাড়বে। 

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.