নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বিভিন্ন এলাকায় উঁচু তাল, নারিকেল, খেজুর গাছে এক সময় দেখা মিল বাবুই পাখির বাসা।
এদের বিচরণক্ষেত্র। যে দিকে চোখ যায় প্রায় উঁচু গাছে দেখা মিলবে বাবুই পাখির বাসা। তবে গ্রাম-বাংলায় দৃষ্টিনন্দন এ পাখির বেশি দেখা মিলতো এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর।
কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। বাবুই পাখিকে শৈল্পিক ইঞ্জিনিয়ার বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। এরা বেশ দলবদ্ধ প্রাণি আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে পছন্দ করে।
বাবুই প্রজাতির পুরুষ সদস্য বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়। কিছু প্রজাতি তাদের প্রজনন মৌসুমে বর্ণের ভিন্নতা প্রদর্শন করে। এক সময় গাঁও-গ্রামে বুননশিল্পী পাখি ও বাসার সন্ধানে পাখিপ্রেমিরা ছবি তুলতে, কিচির-মিচির শব্দ শোনার জন্য আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। এখন আর তেমন একটা বাবুই পাখি চোখে পড়ে না। পড়ে না নয়নাভিরাম বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। গাঁও-গ্রামের আকাঁবাঁকা মেঠোপথে, পতিত উঁচু ভিটেমাটিতে, কখনও কখনও বাড়ির সীমানায় শোভাবর্ধন তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা শোভা পেত। তা দেখে মানুষ মুগ্ধ হতো। এখন সেই তালগাছও প্রায় বিপন্ন হতে চলছে। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই।বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মতো দেখতে। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়া ঘাসের আস্তরণ ছাড়ায়।যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গাও তৈরি করা হয়। অন্য দিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকে। কথিত আছে- বাবুই পাখি চালাকও কম নয়। রাতে বাসায় আলো জ্বালাতে জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় গুঁজে রাখে। বাবুই পাখি যত্ন করে তালপাতা, কাঁশবনের পাতা, খড়কুটো দিয়েই উঁচু তালগাছে, নারিকেল, কড়ই, খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। বাসা যখন উঁচু তাল গাছে দোল খায়, তখন দারুণ লাগে। তাদের শৈল্পিক চিন্তা এতই প্রবল ঝড় কিংবা তুফানেও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারে না। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।