মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে হত্যা মামলার দুই আসামীর বাড়ি। কয়েকশত বিক্ষুব্ধ জনতা উপস্থিত হয়ে গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই ) বেলা ১১ টার দিকে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মিলে নুর রহমান ও সওদাগর হালদার এর ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগে চেয়ারম্যান সুমন হত্যা কারীদের ফাঁসির দাবিতে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় এর সামনে হাজারো লোকের অংশগ্রহণে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে হত্যা কারীদের বিভিন্ন অপরাধের চিত্র তুলে ধরেন মানববন্ধন কারীরা। এ সময় ওই হত্যাকারী দুষকারীকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটেপড়েন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ওই হত্যাকারীরা। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মিলন হালদার ও সওদাগার হালদার , কাউসার হালদার এদের কোন সুনির্দিষ্ট পেশা নেই । বিভিন্ন অপকর্ম করেতা দিয়েই চলে ওই সমস্ত অপরাধীদের জীবন ও জীবিকা। মূলত এলাকায় বিভিন্ন অসহায় মানুষের কাছ হতে জোরপূর্বক বিভিন্ন কৌশলে টাকা আদায় করেই জীবিকা নির্বাহ করতো ওই সমস্ত আসামিরা। এছাড়া নূর মোহাম্মদ ও ভোলা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত এলাকায় চিহ্নিত অস্ত্রধারী।
নূর মোহাম্মদ ও ভোলা এর আগে গত সংসদ নির্বাচনে চলাকালীন সময়ে পাঁচটি অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ওই এলাকার মিজান মোল্লার মিছিলে উপর হামলা চালায়। মিছিলে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে তারা।
মিলে নুর রহমান চেয়ারম্যান, ওই এলাকায় বিভিন্ন চাঁদাবাজির সহিত জড়িত। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, মৃত্যু সনদ দেওয়ার বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা। তাছাড়াও নিজের লোকদের বিশেষ করে সিটি কাউসারকে দিয়ে পাঁচগাও বাজারে চাঁদাবাজির মত ঘটনা ঘটানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাচগাও বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সিটিকা ও সারসহ মিলন হালদারকে চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় বাসিন্দারা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সাবেক ইউপি সদস্য আয়েশা বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে নূর মোহাম্মদ আমার কাছে এলাকায় কাঠের পুলনির্মাণ করতে সরকারি বরাদ্দের ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে আসে। আমিও আমার ছেলের উপরহামলা চালায়। আমার ছেলেকে মারধর করে নূর মোহাম্মদ।
এছাড়া ওই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কারী মিজান মোল্লা অভিযোগ করেন, নূর মোহাম্মদ , কাওসার ও ভোলা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকের মিছিলনিয়ে টঙ্গীবাড়িতে যাওয়ার পথে পাঁচটি অস্ত্র নিয়ে তার মিছিলের উপর হামলা চালায়।
মিলন হালদারের ছত্রছায়ায় এই সমস্তকমর্ কাণ্ডে বিগত দুই যুগে তার জনপ্রিয়তা শূন্যে নেমে আসে। বিগত কয়েক বছরে চারটি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও কোন নির্বাচনে পাশতো দূরের কথা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছিলেননা তিনি। এ বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পান মিলন।
গত ইউপি নির্বাচনে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন দক্ষিণাঞ্চল হতে একাই প্রার্থী ছিলেন মিলন হালদার আর উত্তর অঞ্চল হতে প্রার্থী ছিলেন হাজী মনজুর আলী শেখ। কৌশলী মিলন চেয়ারম্যান পাঁচগাঁও ইউনিয়নের উত্তরাঞ্চলের প্রার্থী মঞ্জুর আলী শেখ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষকে বকাঝকা করেছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ নির্বাচনে টাকা খায় বলেছে বলে মিথ্যা রটনা রটিয়ে দক্ষিন অঞ্চলের মানুষকে উত্তর অঞ্চলের প্রার্থী মনজুর আলী শেখের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। পরে দক্ষিণাঞ্চলে ভোট বেশি হওয়ায় আঞ্চলিকতার জেরে দীর্ঘদিন পরে পাঁচগাও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয় মিলন। জয়ী হওয়ার পরই এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় ওই এলাকার লোকজন।
চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পাঁচগাঁও বাজারে তার উপর হামলা চালিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে । পরে পুলিশ মিলন চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তার ভাই জাহানুর রহমান সওদাগারের কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। এলাকায় বিচারের নামে বিচারের পক্ষদের কাজ হতে উৎকোচ আর চাঁদাবাজি করেই চলে তার সংসার। তাছাড়া এলাকার মানুষকে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষকে খেপিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা কড়াতে আদালতে নিয়ে আসে সে। প্রায়ই মুন্সীগঞ্জ আদালতে দেখা যেততাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত দুই বছর আগে পাচগাঁও গ্রামের নুরু সৈয়াল পাচগাও বাজারে দোকান ঘর তুলতে গেলে তার কাজ হতে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন মিলন ও তার ভাই সওদাগর। পাঁচগাও বাজারের অপর ব্যবসায়ী চাঠাতি পাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বেপারীর কাছেও ৩০,০০০ টাকা চায় মিলন ও সওদাগার। বিগত প্রায় পাঁচ বছর আগে পাঁচগাও বাজারের মোল্লা মার্কেটে আব্দুল হাই মোল্লা দোকান ঘর তুললে তার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা চায় তারা।
দশত্তর গ্রামের রাজু শেখ তার কাছ থেকে চাঁদা চায় কিন্তু সে চাঁদা না দেওয়ায় পাঁচগাঁও বাজারে দোকান ঘর তোলার সময় অনেক ঝামেলা করে মিলন সওদাগর মিলে। দুই বছর আগে বাজারের মসজিদের অজুখানা করার সময় মসজিদ কমিটির কাছ থেকে ৫০০০ টাকা চাঁদা নেয় সওদাগর। ওই সমস্ত ঘটনায় ওই এলাকার জনগণ ক্ষুদ্র ছিল মিলন চেয়ারম্যান তার ভাই সওদাগর কাউসারসহ ওই পরিবারের লোকজনের উপর। এই অপকর্মের মূল সারথী ছিলেন সুমন হত্যার প্রধান আসামি নূর মোহাম্মদ ও ভোলা। তারা এলাকায় অস্ত্রধারী হিসাবে পরিচিত।
সুমন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হতেই নূর মোহাম্মদ ও ভোলা ওই এলাকায় বিভিন্ন চাঁদাবাজি ও অপকর্ম শুরু করেন। এতে বাধা দিন সুমন চেয়ারম্যান। এতে সুমন চেয়ারম্যান চোখের কাটা হয়ে ওঠেন নূর মোহাম্মদ ও ভোলা। সুমন চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করার দুই দিন আগে নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই ভোলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে আসেন আর হুমকি দিয়ে আসেন তাকে প্রকাশ্যে পেলেই গুলিকরে মেরে ফেলবেন।
এই ঘটনার দুই দিন পরেই গত ৭ই জুলাই সুমন হত্যা মামলার আসামি কাউসার কৌশলে সুমন হালদারকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান পাচগাঁও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে। সেখানে নিয়ে গেলে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে সুমন হালদারকে গুলি করে নূর মোহাম্মদ। এ সময় ঘটনাস্থল হতে গুলি করে পালিয়ে যায় মূল দুষ্কৃতিকারীরা।
নিহত সুমন হালদারের স্ত্রী এলাচ আক্তার বলেন, হত্যার দুই দিন আগে খুনি নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই ভোলা আমাদের বাড়িতে এসে সুমন হালদারকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে যায় এবং তাকে বাড়ির বাইরে পেলে প্রকাশ্যে গুলি করবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। পরে ঘটনা দিন ৭ জুলাই কাউসার এসে আমার স্বামীকে এক ঘন্টার জন্য ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে যেতে হবে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে ওখানে নিয়ে গিয়ে তাকে গুলি করে।
সুমন হালদারকে হত্যার ঘটনার একদিন পর তার ছোট ভাই ইমন হালদার বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামিকরে টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করলেও মূল আসামিদের ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ। সব মিলিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আসামীদের পরিবারের উপর পড়ে তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে আগুন ধরিয়ে দেন দুই আসামি মিলে নুর রহমান মিলন ও সওদাগরের বাড়িতে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীনগর সার্কেল মোঃ তোফায়েল হোসেন সরকার বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। ওই হত্যা মামলায় তিন আসামি গ্রেফতার আছে ৪ পলাতক আসামিকে ধরতে পুলিশার অভিযান চলছে বলেও জানান এএসপি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh