কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বড়লই মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান খন্দকার।
তার দাবি উপজেলা প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজস করে কাজ শেষ না করেই সমুদয় বিলও উত্তোলন করেছেন।
দায়সারা ভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ করা ও কাজ শেষ না করেই টাকা উত্তোলনের ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের ওই দুই কর্মকর্তা। ঠিকাদারের দাবি অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আবার টাকা দাবির পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন ভবন নির্মাণে ত্রুটি পাওয়া গেছে। ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের উন্নয়ন কর্মসূচির (পিডিপি-৪) আওতায় ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বড়লই মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় লালমনিরহাট জেলার এসএস কনস্ট্রাকশন। ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর পর কাজে ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে প্রধান শিক্ষক সহ স্কুল পরিচালনা কমিটির লোকজন নির্মাণ কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন তাদের কোন কথাই গ্রাহ্য করেননি। তারা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ভবন নির্মাণ কাজ করতে থাকেন। ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলী ও কাজ তদারকির দায়িত্ব পালনকারী উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দারস্থ হলে তারা ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গান এবং কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে বলে জানান।
বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে গাঁথুনীর কাজ করা, দরজায় নিম্ন মানের কাঠ লাগানো, ভবনে নিম্নমানের রং ও বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার, ব্লাকবোর্ড নিম্নমানের ও ভবনের ছাদের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা সহ নানা ত্রুটি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, এই ভবনের কাজে অনেক ত্রুটি রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উপজেলা প্রকৌশলী বদলি হয়ে গেছেন। ভবনের কাজও শেষ দেখানো হয়েছে। এর সমুদয় বিলও তুলে নেয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ কাজের সমাধানের জন্য আমি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি।
ভবনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত লালমনিরহাটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকার শাহজামাল বলেন, ভবন নির্মাণে অনিয়ম হয়নি। ওই প্রধান শিক্ষক আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছিল। তার দাবিকৃত টাকা দেইনি বলে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূর ইসলাম জানান, নতুন ভবন নির্মাণ কাজে অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী সহ ঠিকাদারের লোকজনকে নিয়ম মাফিক কাজ করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা কানেই তোলেননি। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন অনিয়মের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজিব বলেন, ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিয়মানুযায়ী নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে ভবনটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক প্রত্যয়নও দিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকবর কবির জানান, তিনি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ভবন নির্মাণ কাজে ত্রুটি পেয়েছেন। তিনি কাজে ত্রুটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, এখানকার আগের প্রকৌশলী ওই বিদ্যালয় ভবনের কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে এখান থেকে বদলি হয়ে গেছেন। তিনি এখানে দ্বায়িত্বে আসার পর জানতে পারেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত ও পরামর্শানুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh