এখন চলছে মধু মাস। আম, লিচু, আনারস আর কাঁঠালের পাশাপাশি জামের চলছে ভরা মৌসুমও। জাম গ্রীষ্মকালীন অন্যতম ফল হলেও অন্যান্য মৌসুমি ফলের তুলনায় পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় স্থানীয়পর্যায়ে এর চাহিদাও রয়েছে বেশ।
এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলায় চলতি মৌসুমের জাম ফল বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দিন দিন জমজমাট হচ্ছে জামের বাজার।
এদিকে একাধিক স্থানীয় জাম ব্যবসায়ীরা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার জামের ফলন কিছুটা কম হলেও বিক্রিতে বেশ ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। সোনারগাঁ ও তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার জাম বাজারে উঠতে শুরু করায় বিকিকিনি জমজমাট হয়ে উঠেছে। এতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে পুষ্টিকর ফল জাম আকার অনুযায়ী খুদি জাত এবং মহিষ জাত নামে দুই জাতের জাম পাওয়া যাচ্ছে। এই ফলটি প্রথমে সবুজ থাকে যা পরে গোলাপি হয় এবং পাকলে কালচে বেগুনি রঙ ধারণ করে। স্বাদে রয়েছে টক ও মিষ্টি। আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে জামের ফলন কিছুটা কম হলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুবই খুশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সোনারগাঁ সাদিপুর,জামপুর, মদনপুর শম্ভ পুরা, পিরোজপুর, সোনারগাঁ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাড়ির আঙিনায়, পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় বেশ জাম গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে বেগুনি আর কালো রঙের মন মাতানো জাম। কালো আর বেগুনি রঙের সমাহার চোখে পড়ে। জামের ভরা মৌসুম হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা জাম পাড়া নিয়ে অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার জাম টক মিষ্টি আর সুস্বাদু হওয়ায় জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে এর কদর। উপজেলা কৃষি অফিস ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান এতে শর্করা আছে প্রায় ১৫ দশমিক ৫৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ গ্রাম। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়। কৃষি অফিস জানিয়েছেন, সব ধরনের মাটিতে জাম চাষ করা যায়। উচ্চ ফলনের জন্য সু-নিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি প্রয়োজন। লবণাক্ততা এবং জলমগ্ন জায়গায়ও জাম ভালোভাবে উৎপাদিত হয়। এদিকে সোনারগাঁ চৌরাস্তা বাজারে ও পানাম পৌরসভা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমি ফল বিক্রেতারা জামের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। তবে দেখতে সুন্দর হালকা টক ও মিষ্টি স্বাদে ভরপুর হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বেশ কদর রয়েছে। পানাম পৌরসভা বাজারের জাম বিক্রেতা মোঃ সাত্তার মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি বাজারে জাম বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি জাম ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম আরো কমে আসবে বলে জানান।
জাম বিক্রেতা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছের জাম সংগ্রহ করে তিনি বাজারে বিক্রি করছেন। অল্প পরিসরে জাম চাষ হওয়ায় বাজারে জামের কদর বেশ ভালো রয়েছে। দৈনিক জাম বিক্রি করে ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা আয় হয় বলে জানান।মোঃ রাজা মিয়া বলেন, এই প্রথম নিজ গাছের ১০ কেজি জাম বিক্রির জন্য বাজারে এনেছিলাম। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে সব জাম বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুব খুশি।
জাম গাছের মালিক সাদিপুরে মোঃ আল আমীন বলেন, তার বাড়ির আঙিনায় আর পুকুর পাড়ে ৫টি ছোটবড় জাম গাছ রয়েছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে চলছে কেনাবেচা। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার জাম তিনি বিক্রি করেছেন। গাছে আরো যে জাম রয়েছে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আরো ১৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। গাছের জাম বিক্রির জন্য বাজারে আনতে হয় না। বিক্রেতারা বাড়ি থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যান। সোনারগাঁ হামছাদি গ্রামের মোঃ জুয়েল মিয়া জানায়, বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছের জাম সংগ্রহ করে এ পর্যন্ত ১ মণ জাম পাইকারদের কাছে তিনি বিক্রি করেছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আরো ১ মণ জাম বিক্রি হবে।
মোঃ সুরোজ মিয়া বলেন, পুকুর পাড়ে তার ২টি জাম গাছ রয়েছে। আরো ৫-৬ দিন পর জাম পাড়া যাবে। দুটি গাছ থেকে ৩-৪ হাজার টাকার বেশি জাম বিক্রি হবে।
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের বাড়ির আঙিনা পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় অনেকটা অনাদরে জাম গাছ বেড়ে উঠছে। গাছগুলো যেহেতু বড় আকৃতির হয় এবং ফলের পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও সরবরাহ কষ্টসাধ্য বিষয় হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না। তবে জাম একটি লাভজনক ফল। যার যার অবস্থান থেকে যদি বাড়ির আশপাশে গাছ লাগিয়ে যত্ন করা হয় তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের আয়ও বাড়বে।
মৌসুমি ফলসহ পরিবেশবান্ধব গাছ লাগাতে সার্বিকভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh