দেশে চলছে পুরোদস্তুর মধুমাস খ্যাত জৈষ্ঠ্যমাস। কাঁঠাল, আম, লিচুসহ বাহারি ফলের সমাহার ঘটে এ ঋতুতে। দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ একই সাথে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবের মধ্যেও থেমে নেই মিষ্টি ফল কাঁঠালের আস্বাদন। তবে গ্রামে এ মৌসুমে জামাই বরণ করার পৌরাণিক রীতি আজও দেখা যায় কালে ভদ্রে।
মধুমাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাসে সর্বত্রই কাঁঠালের ম-ম গন্ধ। মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া, ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বিভিন্ন পরিবহনে চড়ে কাঁঠাল বিক্রির উদ্দেশ্যে মাটিরাঙ্গা বাজারে জড়ো হন বাগান মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়। সম্ভাব্য উৎপাদন ২১ হাজার ৬শত মেট্রিকটন।
এ বছর বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৬০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে সম্ভাব্য উৎপাদন ২২ হাজার ৬শত ৪০ মেট্রিকটন।
এদিকে পাহাড়ের কাঁঠাল বেশ সুস্বাদু এবং শতভাগ ফরমালিনমুক্ত বিধায় দেশের অন্যত্র এ কাঁঠাল বেশ জনপ্রিয়। তাই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁঠাল ব্যাবসায়ীরা মাটিরাঙ্গায় আসেন কাঁঠাল কিনতে। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা পর্যটন এলাকা হবার দরুন বহু পর্যটক তাদের স্ব-স্ব পরিবহন থামিয়ে দুএকটি কাঁঠাল কিনতে ভুলেও যেন ভুল করেন না।
মাটিরাঙ্গায় সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার হলেও কাঁঠাল বাজার বসে শুক্রবার। এদিনে কাঁঠাল বেচাবিক্রি হয় ধুম। মাটিরাঙ্গা বাজার গুরে দেখা মিলে খাগড়াছড়ি-চট্রগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে
প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কাঁঠালের বাজার। চোখ যত দূর যায় শুধু কাঁঠালেই সয়লাব। মধুফল কাঁঠালের সুমিষ্ট ঘ্রাণে ভরপুর চারদিক। বিক্রেতার হাঁকডাক, চলছে ক্রেতার দামাদামি। কেহই বা আবার সূর্যের অতি রশ্মির কারণে কাঁঠালের রং নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে স্তূপের উপরিভাগে জঙ্গলের লতাপাতা দিয়ে ডেকে রাখছেন।
প্রতিটি কাঁঠালের স্তূপ পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। আকার ও মানভেদে খুচরা মূল্যে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৪০/৫০টাকায়। আর ছোট সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে বড় সাইজের কাঁঠালের চাহিদা বেশি। তবে এ বছর কাঁঠালের ফলন কম দামেও সস্তা বলে মনে করেন বাগান মালিকরা।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ইজারাদার প্রতিনিধি হজরত আলী বলেন, প্রতি সাপ্তাহে ছোট বড় প্রায় ৩০টি কাঁঠালের গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। একটি বড় গাড়িতে ২ হাজার কাঁঠাল ধারণ ক্ষমতা থাকে। গতবারের তুলনায় এবার কাঁঠালের ফলন কম বলে তিনি মনে করেন।
স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী জালাল মিয়া বলেন, এ বছর কাঁঠালের দাম কম মানুষ এখন নতুন করে কাঁঠাল বাগান করেন না। কাঁঠাল বাগান কেটে আম লিচুর বাগান করেন। তবে দাম কম হলেও কাঁঠালের ফলন ভাল হলে লোকসান গুনতে হয় না।
ফলের দাম রোদ-বৃষ্টির ওপরও নির্ভর করে জানিয়ে কাঁঠাল ব্যবসায়ী রহমান বলেন, মাটিরাঙ্গায় বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফলের সরবরাহ বেড়েছে। তবে বৃষ্টি পড়লে মানুষ কাঁঠাল খেতে চায়, তাই চাহিদা বেশি থাকার কারণে দামও এই সময় বেশি থাকে। আবার গরম বেশি পড়লে মানুষ তেমন কাঁঠাল খেতে চায় না, ওই সময় দামও কমে যায়।
ক্রেতা জসিমউদ্দীন বলেন, বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফলে সয়লাব। আম-লিচুর সঙ্গে কাঁঠালও কিনেছি। আত্মীয়ের বাড়িতে কাঁঠাল পাঠাবো বলে আরো কিছু কিনবো।
পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গ্রীষ্মের মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বিক্রি চলবে সামনের বর্ষা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত। তার দাবি, এখানকার কাঁঠালের কদর রয়েছে চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজন। কাঁচা কাঁঠাল রোগ-ব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh