× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নির্বাচনের ট্রেনে শ্রমিক নেতাকে হারিয়ে জয়নাল আবেদীন জয়ী হওয়ার নেপথ্যে কী!

এ.এম হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

১৩ মে ২০২৪, ১৫:১৬ পিএম

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন জয়নাল আবেদীন। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দুই প্রভাবশালী নেতাকে হারিয়ে মাহেন্দ্রক্ষণে চুড়ান্ত বিজয়ী হয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও তরুণ সমাজ সেবক জয়নাল আবেদীন। 

হঠাৎ করে ব্যবসা থেকে নির্বাচনের ট্রেনে চেয়ারম্যান পদে উঠে আসায় উপজেলা জুড়ে নানা আলোচনা চলছে।

পরাজিত প্রার্থীর কিছু নেতা-কর্মীর ভাষ্য, বৃষ্টির কারণে তাদের ভোটার উপস্থিত না হওয়ায় হেরেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী শ্রমিক নেতা হাবিব উল্লাহ হাবিব। এই হারকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।

কিন্তু অন্য একটি পক্ষ দাবি করছে, মহেশখালীর দক্ষিণ ছাড়াও উত্তর অঞ্চলের ভোটার অধ্যুষিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালীসহ অনেকের নীরব ভূমিকা, মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয়ভাবে কাজ না করা, ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করা, ভোট শুরুর আগের রাতে বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গিয়ে অস্ত্রধারীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে কেন্দ্রে যেতে ভয়ভীতি প্রর্দশন, নাজোহালসহ বেশ কিছু কারণে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটার মাঠে ঢেউ উঠা তুমুল জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা হাবিব উল্লাহ হেরেছেন।

উপজেলার ৮৬টি ভোটকেন্দ্রের উপজেলা সহকারী রিটানিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত বেসরকারীভাবে ফলাফলে দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে তরুণ সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী মো. জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৩৮ হাজার ১ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টুপি মার্কার প্রার্থী হাবিব উল্লাহ হাবিব পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৮শত ৫৯ ভোট।

জয়নাল আবেদীন উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের গুল গুইল্যা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে ব্যবসা খাতিরে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের  বসবাস করেন। তিনি শহরে বসবাস করলেও মাঝে মধ্যেই ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়ীতে। এলাকায় এসে মানুষের খোঁজ খবর নিতেন। এবং অসহায় মানুষদের গোপনে সহযোগিতা করেছেন তিনি।  একজন উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ সংগঠক, পর্যটন উদ্যোক্তা, ও একজন শিল্পপতি বিজয়ী জয়নাল আবেদীন।

জানাগেছে,ব্যক্তিগতভাবে কোন রাজনীতি দলের পদবীর সাথে সম্পৃক্ত না। তবে রাজনীতির উর্দ্ধে থেকে গোপনে বেশকিছু সামাজিক কাজ চোখে পড়ার মতো। সে সাথে নিজ জন্মভূমি মহেশখালীকে ব্র‍্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে অন্যতম সামাজিক সংগঠন "মহেশখালী পেশাজীবি সমিতি লিঃ " এর অন্যতম উদ্যোক্তা ও সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল ব্যক্তি। 

সদ্য ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কালারমারছড়ার বাসিন্দা সেলিম উল্লাহ বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীফ বাদশাহ,বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যান, ছাত্র,যুব সমাজসহ

আমরা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অনুরোধে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আমরা কয়েকজন মিলে তাঁর পক্ষে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি নিজেও ভোটারদের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ও বিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর আচরণে ভোটাররা মুগ্ধ।’ তিনি বলেন, অন্যপ্রার্থীর পক্ষে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ছিলেন। আর সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের পুরো উপজেলা জুড়ে ভোট ব্যাংক রয়েছে সাথে যোগ হয়েছে ছাত্র সমাজ তা জয়নালকে বিজয়ী করতে কোমর বেঁধে মাঠে কাজ করায় বিজয় সুনিশ্চিত হয়েছে।

কিন্তু তাঁরা ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি। তাই তারা পরাজিত হয়েছে। 

ভোটারদের কেউ কেউ মনে করেন, সাধারণ মানুষ প্রথম থেকে হাবিব উল্লাহকে সমর্থন দিলেও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও অনেক নেতাই হাবিবকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাননি। এসব নেতারা নামে মাত্র মাথায় টুপি দিয়ে ভোট চেয়ে কয়েকটি ছবি ফটোসেশন করে আর ভিড়ি বার্তা দিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া ছিল মুলত তাঁদের কাজ। 

তা ছাড়া ভোটারদের কাছে হাবিব উল্লাহ'র অনেক সাধারণ কর্মী নেতার ভঙ্গিমায় ভোট চেয়েছেন। তাঁর কাছে ওই রাঘব বোয়াল নেতাদের কারণে এলাকার অনেক মানুষ তেমন মূল্যায়ন পাবেন না—ভোটারদের মনে এমন শঙ্কাও ছিল। তবে হাবিব উল্লাহর প্রতি ভোটারদের পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ভোটার বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক শরীফের কর্মী সমর্থকরা সবাই উত্তর অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে চাপ দিয়ে ভয়ভীতি প্রর্দশন করে ছিলেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সাধারণ ভোটাররা। তবে তারেক আগের মত এলাকায় না থেকে কক্সবাজার বসবাস করায় জনশূন্য হয়ে পড়ায় তার আগের মত শক্ত অবস্থান ও ভোট ব্যাংক নাই নিজ এলাকা কালারমারছড়াসহ মহেশখালীর উত্তর অঞ্চলে। তাই তিনি চাপ প্রয়োগ করেও ভোটার উপস্থিত করতে পারেনি বলে মনে করেন মহেশখালীর সুশিল সমাজের লোকজন। 

অপর প্রার্থী গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী নির্বাচনের শেষ মুর্হুতে এসে মাঠ চষে বেড়ালে ও তেমন কিছু করতে পারছিলেন না। তাই ভোটাররা প্রকাশ্যে টুপি বললেও কেন্দ্রে গিয়ে নিরবে জয়নালের দিকে ঝুঁকেছেন।


এদিকে যাপিত সময়ে শুনে এসেছি, হাবিব উল্লাহ  অনেক জনপ্রিয় একজন শ্রমিক নেতা। কক্সবাজারের দেখা হলে বড় মহেশখালীর মানুষেরা তার জনপ্রিয়তার কথা জানাতেন। শুধু বড় মহেশখালী মানুষ নয়; মহেশখালীর উপজেলা, বিশেষ করে উত্তর প্রান্তের মহেশখালীর মানুষগুলো হাবিব উল্লাহ'র অনেক জনপ্রিয়তার বয়ান করতেন। আমি জনগণের মুখে শুনে হাবিব উল্লাহ হাবিবকে বিপুল জনপ্রিয় বলে বিশ্বাস করতাম।

তবে ইতিমধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিউজ কভার করতে গিয়ে যা দেখেছি তা অবিশ্বাস্য! এটা মানুষে মুখে শোনা জনপ্রিয়তার চেয়ে অনেক অনেক উপরে। নির্বাচনের দিন স্বাভাবিকভাবে সব এলাকার ভোট কেন্দ্র কয়েকবার করে পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছে। সবখানে দেখেছি হাবিব উল্লাহ'র টুপি প্রতীকের মানুষের পদচারণা। শুধু কয়েক এক জায়গায় দেখেছি অন্যন্যা প্রার্থীর প্রতীকের কয়েকজন সমর্থককে। 

ভোটাররা টুপি মার্কার শ্লোগান দিচ্ছে। এ এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার বটে!

এ গেলো শুধু বড় মহেশখালীর কথা। কিন্তু আশ্চর্য্য হওয়ার বিষয়টি অন্য জায়গায়। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি শুধু বড় মহেশখালী সীমাবদ্ধ থাকেনি। পুরো মহেশখালীর মানুষ এই নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন। কিন্তু ভিন্নতা অন্য জায়গায়।

সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচনে মাঠে থেকে পাশ্ববর্তী বাইরের ইউনিয়নের অনেক ধরণের পরিচিত মানুষ প্রতিমুহূর্ত আমাকে ফোন করে নির্বাচনের খবরা-খবর জানতে চেয়েছেন। কিন্তু একটি মানুষও পাইনি যিনি অন্য প্রার্থীরা ভোট কেমন পাবে জানতে চেয়েছেন। 

সবার একটা প্রশ্ন- টুপি মার্কা ভোট কেমন পাবেন। আরেকটি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ওই মানুষগুলো। সেটি হলো- ভোটারদের কেউ কি বেঙ্গমানি করে কি ভোট দিবেনা হাবিব উল্লাহকে। যেন নিজের খুব কাছের কেউ নির্বাচন করছেন।

নির্বাচনের সন্ধ্যা বেলা পেশাগত কাজ শেষ করে নিজ ইউনিয়ন ফিরি। দেখি রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। আমাকে পেয়ে সবাই যেন অস্থির! কি হবে, হাবিব উল্লাহ কী চেয়ারম্যান হবে? অনেকে যেন টেনশনে চুল ছিড়ে খাবে!

 তবে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে পেরেছিলাম- হয়তে ভোটার মাঠের অবস্থা দেখে অনুমান করতে পারি চেয়ারম্যান হতে পারে। কেননা ভোটের চিত্রটা আমি সে দিন সেভাবে দেখেছিলাম। 

তবে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে জয়নালকে ভোট দিয়ে ক্ষোভের বহি প্রকাশ ঘটিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। অনেকে বলছেন জনপ্রিয় ব্যক্তি হাবিব উল্লাহকে মানুষ ভূ্লতে পারবেনা তবে তার পক্ষে ভোট চাইতে যারা মাঠে ছিল গুটি কয়েক প্রভাবশালীদের দুব্যবহারের যারা হাবিব উল্লাহকে ভোট দেওয়ার জন্য অধির আগ্রহে বসে থেকে ছিল তারা তাকে শেষ পর্যন্ত ভোট দেয়নি।

ভোটারের কাছে ছুটে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজয় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। ভোটাররাও তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন বলে মনে করেন তিনি। জয়নাল বলেন,  সবাই আস্থা রেখেছেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।’ ###

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.