× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জন্মনিবন্ধনে বয়স বেশি দেখিয়ে স্কুলছাত্রীর বিয়ে আজ

ইয়াছিন আরাফাত, মহেশখালী প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১৮ পিএম

‘বিয়ে’ শব্দটির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচয় হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে হীরা মনি। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এই কিশোরীর গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) ছিল গায়ে হলুদ। আজ সোমবার তার বিয়ে।

জন্মনিবন্ধন সনদে বয়স ১৮-এর ঊর্ধ্বে দেখিয়ে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীর একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে কাবিনামা করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিয়ের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বর ও কনের পরিবার।

এলাকাবাসী, বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাতারবাড়ী সাতঘর পাড়া ৪নং ওয়ার্ড নাজেম উদ্দিনের একটি বিদ্যালয়ে পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শাফরিয়া মারজিয়া খানম ডাক নাম হিরা মনি (১৪) সঙ্গে একই ইউনিয়নের উত্তর রাজঘাট এলাকার প্রবাসী মোস্তাক আহমদের পুত্র শফিউল আলমের সাথে তাড়াহুড়া করে সস্প্রতি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানিয়েছে।

তবে আজ সোমবার (২২ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে কনের বাড়ী থেকে স্কুল পড়ুয়া মেয়েটিকে বরের বাড়ীতে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা জানান, বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত একজন মেয়ের বয়স ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে হবে না। তবে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যসহ একটি সিন্ডিকেট মিলেমিশে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদে ১৮ বছরে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন যেখানে তিনিসহ দায়িত্বশীল অনেকের স্বাক্ষর রয়েছে। 

বিয়ে নিবন্ধন করেন মাতারবাড়ী সরকারী কাজী আব্দুল মাজেদ কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন বয়সে কম হলে বাল্য বিবাহের কাজ আমি করিনা, তাই আমার এখানে কনে এবং বর পক্ষের কেউ আসেনি, অন্য এলাকার কাজীর মাধ্যমে হয়তো কাবিননামা করে বিয়ে হয়েছে। নিয়ম অনুসারে নিজ এলাকার কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করাতে হয় বলে জানান তিনি।

মাতারবাড়ী মডেল নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুর নবী বলেন, ‘মেয়েটি এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের বিয়ের কথা বলেনি। তবে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া একজন মেয়ের বয়স ১৫ বছর হতে পারে। তবে এটি বাল্যবিবাহ। হয়তো অজ্ঞ পরিবার হওয়ায় বাবা-মায়ের চাপে সে বিয়েতে রাজি হয়েছে।’

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বয়স বাড়িয়ে দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদের স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর কোন ফটোকপি বা ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি হিরা মনির পরিবার তবে তারা মুখিক বলছে বিয়ের বয়স ১৮ বছর হয়েছে। অনেক বলছে বিদেশ ফেরৎ যুবককে টাকার লোভে বিয়ে দিচ্ছেন হিরা মনির পরিবার। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ইউপি সদস্যদের দায়ীত্ব বাল্যবিয়ে বন্ধ করা। অথচ তারা তা না করে বরং স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে নতুন জন্ম সনদ দিচ্ছেন। তাদের সদিচ্ছার অভাবে বাল্য বিয়ে বেড়ে গেছে ইউনিয়নে। আর এসব তারা ভোটের জন্যই করছেন।

অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মহিলা মেম্বার হোসনে,পরিষদের সেক্রেটারি,স্থানীয় এক ডাক্তারসহ কয়েকজন  সিন্ডিকেট লাখ টাকার বিনিময়ে স্কুল ছাত্রীর বয়স বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন ইস্যু করে বাল্য বিবাহ দেওয়ার জন্য এ সনদ প্রদান করেন। 

তবে অভিযোগে বিষয়ে জানতে ইউপি মহিলা ইউপি সদস্য হোসনে আরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমি আবেদন পত্র স্বাক্ষর করেছি মাত্র।  তবে মেয়েটির বয়স ১৮ না হলেও এর কাছাকাছি বলে উদুর উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।  

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার বলেন- বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। 

মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাহফুজুল হক বলেন- বয়স প্রমাণের জন্য স্থানীয় কোন ডাক্তার স্বাক্ষর করতে পারে না। যদি বয়স প্রমাণ করতে হয় তাহলে আবেদনের পেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করেন। এরকম কেউ মনগড়া স্বাক্ষর দিলে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীকি মারমা  গতকাল রাত ১১ টার সময় বলেন, ‘ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধমে খোঁজ খবর নিয়ে এ বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জন্মনিবন্ধন সনদ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান দিয়ে থাকেন। এ নিয়ে কোনো অনিয়ম হলে  বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

হিরা মনির বাবা নাজেম উদ্দিন বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী আমার মেয়ের বয়স ১৮ বছর তাই বিয়ের উপযুক্ত। তবে স্কুলের বয়সে ১৪ বছর হবে বলে প্রশ্মে করলে এক পর্যায়ে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। এর ধারা প্রতিমান যে মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে জন্মনিবন্ধন তৈরি করেছেন নাজেম উদ্দিন। তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলতে বলেন।

তবে এটা যে বাল্য বিবাহ তা তিনি অস্বীকার করেন।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.