চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মোহনপুর পর্যটনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। বারবার হামলার ঘটনাটি নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শেষ হয়নি। এমনকি প্রশাসন থেকেও কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের গাছাড়াভাব প্রকারন্তে সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করেছে বলে পর্যটন কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার চাঁদপুর আদালতে ৬৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। যার প্রতিশোধ নিতে আজ বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সন্ত্রাসীরা দলবদ্ধ হয়ে আবারও মোহনপুর পর্যটনে হামলা চালিয়েছে। আগের চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা এ হামলা করেছে।
হামলাটি বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হলেও সেখানে পুলিশ এসে উপস্থিত হয় বিকেল পৌনে ৬টার দিকে। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতেই দুর্বৃত্তরা হামলা অব্যাহত রাখে। প্রশাসনকে বারবার ফোন দেওয়ার পর অবশেষে পুলিশকে হামলাকারীদের বের করে দিতে দেখা যায়। এসময় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। নতুন করে মামলা হওয়ার পরও হামলাকারীদের সামনে পেয়েও তাদের গ্রেফতার বা কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
মোহনপুর পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানান, পুলিশ প্রশাসনকে পূর্ব পরিকল্পিত এ হামলার ব্যাপারে মঙ্গলবার সকাল থেকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি, এমনকি সহযোগিতাও করেনি। পুলিশের উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় মোহনপুর পর্যটন কর্তৃপক্ষ ব্যাপক চিন্তিত।
কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো ৫০ এর অধিক কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। হামলাকারীরা গতকাল আবারও তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গেছে। এভাবে কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন। কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তা একই সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রটির সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজে বারবার সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
এর আগে গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রসহ চাঁদপুর-২ অসনের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার অনুসারী প্রায় তিন-চারশ নারী-পুরুষ পর্যটনের ১ ও ২নং গেইট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে থিম পার্কের বিভিন্ন রাইড ভাঙচুর করে এবং থিমপার্কের দোকানে ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় নিরপত্তায় রক্ষিত সিসি ক্যামরা, দ্যা শিপইন-এর গ্লাস, থিমপার্কের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। একপর্যায়ে পর্যটন বন্ধের হুমকি দেয়।
পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোহনপুর ইউনিয়নের বোরহান খালাসীর নেতৃত্বে রুপমিয়া খালাসীর ছেলে শাহীন খালাসী, শামীম খালাসী, নুর ইসলাম খালাসী, আলো খালাসী, রিতু খালাসী, পাবেল বেপারী, জহির খালাসী, ওয়াসীম, মেহের আহমেদসহ প্রায় তিন-চারশ নারী-পুরুষ এ হামলা চালায়। এসময় বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এমনকি অবিলম্বে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
চলতি মাসের প্রথম দিকেও এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। তখন সন্ত্রাসীরা হামলা করে পর্যটনকেন্দ্রটি চিরতরে বন্ধ করার জন্য কর্মচারী-কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পর্যটন কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক সহায়তা পেতে তখন আইনের আশ্রয় নেন। এমনকি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। কিন্ত দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও তদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা আবারও হামলা করার সাহস দেখিয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটনের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন পেশার মানুষের ভিতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীরা পর্যটনের কর্মরতদের কর্মস্থলে আসতে বাধা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় অবিলম্বে চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
দেশের একমাত্র মিঠাপানির বিচ মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড দেখতে এবং একইসঙ্গে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লঞ্চ, স্টিমার, বাস, হাইসসহ বিভিন্ন মটরযানে দশনার্থীরা ভিড় জমান। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে আগতরা পর্যটনে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এমনকি পর্যটনের গেট থেকে পর্যটকদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে তাদের চলে যেতে বাধ্য করে সন্ত্রাসীরা।
মোহনপুর পর্যটনটি নিয়মিত সরকারের কোষাগারে রাজস্ব প্রদান করে আসছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পথে। এরকম চলতে থাকলে পর্যটনটি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে। ফলে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হবে।
পর্যটনে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ও পর্যটনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসন ওসরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মোহনপুর পর্যটনে কর্মরত কর্মকর্তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh