মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে গোলাগুলিতে কাঁপছে সীমান্ত। বাড়ছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সামরিক জান্তা সদস্যদের মধ্যকার সংঘাতও। এ সংঘাতে টিকতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন বিজিপির অন্তত ৯৫ সদস্য।
বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে সীমান্তের এপারে। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল আর বোমা। গোলাগুলির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এপারের জনবসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের ওপারে থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। আর্টিলারি, মর্টার শেল ও গোলার বিকট শব্দে তুমব্রু সীমান্ত কাঁপছে। শূন্যরেখার আশপাশে প্রায় ৮০০ একর জমিতে বাংলাদেশি কৃষকেরা ধান ও শাক-সবজির চাষাবাদ করেন। সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি ও বাংলাদেশ অংশে গুলি এসে পড়ায় চাষিরা আতঙ্কে খেত-খামারে যেতে সাহস করছেন না।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, তার ইউনিয়নের চাকঢালা, জামছড়ি, আশারতলী, আমতলী এলাকা পড়েছে মিয়ানমার সীমান্তে। সেখানে স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বাঙালিরা ধান, শাক-সবজির চাষাবাদ করেন। ওপারের গোলাগুলিতে তারা আতঙ্কে আছেন।
চাকঢালার কৃষক মং ক্রো বলেন, গোলাগুলির শব্দ এবং গুলি এসে পড়ার শঙ্কায় বহু কৃষক চাষে যেতে পারছেন না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জুমচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে।
তুমব্রু এলাকার চাষি আমিন বলেন, শূন্যরেখার পাশে তার ধান চাষের জমি আছে। চারা রোপণ হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে। এখন সার দিতে হবে। কিন্তু মাঠে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। মাঠের পাশের পাহাড় থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় ভয়ে কেউ চাষে যেতে পারছেন না।
সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কখন গুলি শুরু হয়, কখন বন্ধ হয় তার হিসাব নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল কিংবা গুলি এসে পড়লে সমস্যা এবং শঙ্কা দেখা দেয়।
সীমান্ত বা তুমব্রু বাজারের কাছাকাছিও যেতে পারছেন না গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী বা বাইরের কোনো বাগান মালিকও। পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে স্থানীয়রা অল্প পরিসরে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ভয়ে তেমন কেউ বেরও হচ্ছে না। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা টহল। এ কারণে রাস্তাঘাটে তেমন মানুষও নেই।
স্থানীয় সাংবাদিক আবুল বশর নয়ন বলেন, ওপারে গোলাগুলি ও শুক্রবার মর্টার শেল এসে যুবক আহত হওয়ার পর সড়কে মানুষ নেই বললেই চলে। বলতে গেলে এখানে কোনো মানুষ নিরাপদে নেই। কখন কার ওপর বিপদ চলে আসে বলা যাচ্ছে না। মানুষের একটাই আতঙ্ক কখন মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে সেই ভয়-আতঙ্কে রয়েছে।
তুমব্রু এলাকার কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে আতঙ্কে সব পেশার মানুষ এখন কর্মহীন। ওপার থেকে দিনরাত মুহূর্মুহু গোলাগুলির শব্দেও গত প্রায় এক মাস জীবনযাত্রা মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহ ধরে মর্টার শেল এসে মানুষের বাড়িতে ও আজকে একজন আহত হওয়ার পর চরম আতঙ্ক ভর করেছে সবার মাঝে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে, কৃষক মাঠে যেতে, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে ভয় পাচ্ছে। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সীমান্তবাসীর।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা ছলিম উল্লাহ জানান, বিরতিহীন মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে ভারী অস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। ২-৩ দিন ধরে এ অস্ত্রে আগুন দেখা যায় আকাশে-বাতাসে। ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দে তুমব্রু সীমান্তের এপারের মাটির দেয়াল, কাচের জানালা, পুরাতন কিংবা সেমিপাকা বাড়ির দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। থমথমে পরিস্থিতিতে অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে আছে সীমান্তের মানুষ। ঘরবাড়ি ছেলে কোথাও যেতে পারছেন না তিনি।
তিনি বলেন, সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখতে এবং আগামী এসএসসি-দাখিল পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার নিমিত্তে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তবে ইতোমধ্যে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকারিয়া বলেন, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে আছে। সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার, তুমব্রু সীমান্তবাসীদের অভয় ও নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh