কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের অরিয়াধর বাজারের রাস্তার মোড়ে একটি তেঁতুল গাছ কালের সাক্ষী হয়ে আছে। পাঁচশো বছরের অধিক পুরনো এই গাছটি যুগের পর যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। গ্রাম ও সামাজিক সবখানেই এখন পরিবর্তন। ফলে অতীত চিহ্ন গুলো হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। বৃটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। সবকিছুর সাক্ষী এই তেঁতুল গাছটি।
স্থানীয় প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাছটিকে কেন্দ্র করেই এই খানে জমেছে বাজার। এই তেঁতুল গাছের বিশাল ছায়ার নিচে জমতো বিশাল হাট। হতো মেলা। সপ্তাহে একদিন এখানে হাজারো মানুষের সমাগম হতো৷ কথিত আছে যে, এই পথে চলাচলের সময় এই গাছে একসময় জমিদারদের হাতি বেঁধে রাখা হতো। এই গাছের পাশ দিয়েই একসময় বিশাল প্রবাহমান স্রোতের নদী ছিলো। বিভিন্ন দেশের বণিকরা ব্যাবসা করতে এই অঞ্চলে আসার সময় এই তেঁতুল গাছের নিচে নামাজ শেষে বিশ্রাম নিতেন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়েই এই গাছটি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অপারেশন শেষ করে এই তেঁতুল তলায় মিলিত হতেন মুক্তিযুদ্ধারা। এখনো বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধারা এই গাছের তলায় আসলে পুরনো দিনের কথা মনে করে আবেগাপ্লুত হন । এখনো বাজার রয়েছে। নদী মৃত হলেও এর চিহ্ন আজো রয়েছে। এখানে এখনো মেলা জমে প্রতিবছর। এই গাছটির কত বছরের পুরনো তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় নি৷ অধিকাংশ মানুষ মনে করেন পাঁচশো বছরের অধিক হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ মো. রহম আলী (৮০) জমির উদ্দিন (৭৫) ও ফুল মিয়া ( ৬৭) বলেন, ' আমরা জন্মের পর থেকে এখন যেমন আছে এমনি দেখছি গাছটি। বাপ দাদাদের থেকে শুনছি গাছটি বৃটিশ আমল থেকেই নাকি এমনি। গাছটি আমাদের সুখ-দুঃখের সাক্ষী। তারা জানান, গাছটি কয়েকবার কাটার চেষ্টা করা হলেও ডাল কাটলে রক্ত বের হয় এবং ভয়ানক স্বপ্ন দেখে পরে কেউ আর সাহস করেনি।'
এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে'র) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন,' গাছটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে পুরাতন। আগে আরো ডালপালা ছিলো। শীতল ছায়ার নিচে বিশ্রম নিতো মানুষ।গাছটির দিকে তাকালে শৈশবের স্মৃতি ভেসে উঠে। ছোট সময় বাপ দাদারা আমাদের কোলে নিয়ে গাছটি দেখাতে নিয়ে আসতেন। গাছটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘গাছটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সংরক্ষণ করা যায় কিনা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
লোহাজুরীর মানুষ এখনো গাছটিকে ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রাচীন গাছ হিসাবেই মনে করেন৷ তবে গাছটি সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়ভাবে নেই কোন উদ্যোগ৷ ফলে যে কোন সময় হারিয়ে যেতে পারে নানান স্মৃতির সাক্ষী তেঁতুল গাছটি৷