যশোরের যশ খেজুরের রস শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবেও রয়েছে এর সুনাম। ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতি যাব, আবহমান গ্রামবাংলার জনপ্রিয় আঞ্চলিক গানের কথায় গাছির ব্যস্ততা এখন। যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। প্রকৃতির পালাবদলে এখন প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর সামান্য কুয়াশার জানান দিচ্ছে শীত এসেছে। শীত মৌসুম আসলে যশোর অঞ্চলে শুরু হয় রস আহরণ।
তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়-পাটালির উৎসব, বাড়িতে বাড়িতে চলবে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা পায়েস সহ হরেক রকমের খাবারের ধুম।
মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছিরা দড়ি, দা, ঠুঙ্গিসহ গাছ তোলার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গাছ তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আবার কেউ কেউ ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় আট শতাধিক গাছীরা গাছতোলা ও রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। আগামী ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ হতে শুরু হবে গুড় উৎপাদন।
এই মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে গ্রামিন জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ।শীত যত বাড়বে ,খেজুর রসের মিষ্টি ও ততো বাড়বে।শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষন দিনের শুরুতে খেজুরের রস, সন্ধার রস ও খেজুরের গুড় পাটালি। পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে খেজুরের গুড় অতপ্রত ভাবে জড়িতো।
উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের আতাউর রহমান ফারাজী বলেন,শীত মৌসুমে খেজুরের রস জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার।এই খেজুরের রস দ্বারা বিভিন্ন প্রকার পিঠা পায়েসসহ হরেক রকমের খাবারের ধুম পড়বে কিছুদিনের ভিতরে।
একই ইউনিয়নের ফারুখ শেখ বলেন,যশোর জেলার খেজুরের রস ,গুড় ও পাটালির জন্য বিখ্যাত হওয়ায় গর্ববোধ করি আমরা।
সিদ্ধিপাশা গ্রামের গাছি তৈয়েবুর রহমান গাজী বলেন,গতবছর আমি রস বিক্রয় করে খুব লাভবান হয়েছিলাম,এই জন্য এ বছর খেজুর গাছ অনেক বেশি কেটেছি।আশা করছি এই বছর আরো বেশি লাভবান হবো।
একই গ্রামের গাছি নজরুল ঢালী বলেন, আমাদের খেজুরের গাছ কাটা শুরু করেছি।আর অল্পকিছু দিনের মধ্যে রস বের হবে।সেই রস দিয়ে আমরা যশোর জেলার ঐতিহ্যবাহী গুড় পাটালি তৈরি করবো এবং বাজারে বিক্রয় করে অনেক লাভবান হবো।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন সংবাদ সারাবেলাকে বলছেন, আমারা ইত্যেমধ্যে গাছি সম্মেলন সম্পন্ন করেছি, গাছিদের তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। এই গাছিগণ ৩০২৩৬টি গাছ পর্যায়ক্রমে কাটবেন এবং রস আহরণ করবেন। আমরা আশা করছি যে, প্রায় ৩৫০ থেকে সর্বচ্চো ৭০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত গুড় উৎপাদন করতে পারবো। এই গুড় যাতে নির্ভেজাল হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন ও কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর, অভয়নগর যশোর তৎপর থাকবে।