প্রকৃতিতে বন ও বন্যপ্রাণী বিশেষ অবদান রাখে। সেজন্য বন ও বনের স্তন্যপায়ী মাংসাশী প্রাণীকে প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলেন, মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী সংরক্ষণের জন্য গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে মাংসাশী প্রাণীদের আবাসস্থল, খাদ্য এবং প্রজনন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এ তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আরও কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী প্রকৃতিতে নিরাপদ ভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য বন বিভাগের ভাল্লুক ও বন কুকুর সংরক্ষণ ও গবেষণা (SUFAL innovative grant) প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে। জনসচেতনামূলক অনুষ্ঠানে মাংসাশী প্রাণীদের গুরুত্ব, তাদের সংরক্ষণের প্রয়োাজনীয়তা এবং স্থানীয় জনগণের সাথে তাদের সহাবস্থানের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মাংসাশী প্রাণীদের সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, তাদের সংরক্ষণের উপায় ও স্থানীয় মানুষের মাংসাশী প্রাণীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং মাংসাশী প্রাণীদের সংরক্ষণে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ব্যাপকতর করার জন্য কর্মসূচী চলছে।
বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জুড়ী রেঞ্জের পাথারিয়া অভয়ারণ্যে লাঠিটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে সচেতনতামূলক একটি কর্মশালা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালায় পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের স্থানীয় প্রতিনিধি, বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশবাদী সেচ্ছাসেবী সংগঠন পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য কামরুল হাসান নোমান বলেন, এক সময় মানুষ বন্যপ্রাণী সমন্ধে জানতো না। এখন মানুষ লেখাপড়া করে বন ও বন্যপ্রাণী সমন্ধে অনেক কিছু জানে। আগে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে দেখলে এটাকে আগে মারার জন্য প্রতিযোগিতা নেমে আসতো। কিন্তু এখন লেকালয়ে বন্যপ্রাণী দেখলে এটাকে না মেরে বন বিভাগ ও স্থানীয় পরিবেশবাদী টিমকে খবর দেয়। আগের তুলনায় এখন অনেক সময় মানুষের হাত থেকে বন্যপ্রাণী জীবন ফিরে পায়। এভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভিত্তিক বাচ্চাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা খুব দরকার। তারা এভাবে গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের সংঘাত কমে আসবে।
প্রকল্পটির গবেষণা সহকারী সুলতান আহমদ বলেন, মাংসাশী প্রাণীরা বন্যপ্রাণী ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা শিকার করার মাধ্যমে বনের খাদ্য শৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণ করে এছাড়াও তারা গাছপালা এবং ফল-মূলের বীজ ছড়িয়ে দিয়ে বনায়নের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আঁকাশ বলেন, বাংলাদেশের মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাঝে বাঘ বাদে বাকি সব প্রাণীদের আবাস এখনো আমাদের পাহাড়ি বন। অজ্ঞানতায় এদের বাসস্থান যেমন ধবংস হচ্ছে তেমনি মানুষের সাথে বাড়ছে দূরত্ব। এরকম অবস্থায় বন বিভাগের সুফল কার্যক্রমের অধীনে ভাল্লুক, ঢোল সহ পাহাড়ের মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়ে এ গবেষণা ও সংরক্ষণ উদ্যোগ উৎসাহব্যঞ্জক। স্থানীয় তরুণ এবং শিশু-কিশোরদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বিলুপ্তপ্রায় ও সহজে দেখা পাওয়া যায় না এমন প্রাণী পরিচিতি বিষয়ক এ কার্যক্রম দেশের সকল বন সংলগ্ন জনপদে ছড়িয়ে পড়–ক। লাঠিটিলা-পাথারিয়া তার দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সিলেট বন বিভাগের আওতাধীন জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন বলেন, মাংসাশী প্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। এই কর্মশালায় মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, তাদের সংরক্ষণের উপায় এবং তাদের সাথে মানুষের সহাবস্থান নিয়ে আলোচনা করা এগুলো মানুষের জানা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখান থেকে শিখে গড়ে উঠা উচিত। এই উদ্যোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে খুদে শিক্ষার্থীরা অনেক অজানা বিষয় গুলো সহজে জেনে নিতে পারবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh