পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ও অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বেথুরীয়া ইউনিয়নের সাধুহাটী গ্রামের প্রভাবশালী এক খামার মালিকের বিরুদ্ধে মরা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ করেছেন ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক গ্রামবাসী।
এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম। শুধু তাই নয় সম্প্রতি প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত নাম সর্বস্বহীন ওই গরুর খামারটির মালিকানা নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াশা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) সকালে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জ সহ অন্যান্য সংগঠনের একাধিক সাংবাদিকগণ সাধুহাটী গ্রামের সেই খামারে সরেজমিনে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের জন্য উপস্থিত হলে মেম্বার আরোজ আলী মোল্যা, তার ছেলে ফয়সাল মোল্যা সহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়। পরে এবিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা স্থানীয় রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আরোজ আলী মোল্যা মেম্বার বলেন, স্ট্রোক করে গরুটি অসুস্থ হলে তা জবাই দিয়ে স্থানীয় কসাইদের মাধ্যমে সেই মাংস বিক্রি করে দিয়েছি।গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে খামারের মালিকানা তিনি দাবি করলেও তার স্বপক্ষে বৈধ কোন কাগজপত্র তাৎক্ষণিক তিনি দেখাতে পারেননি। পরের দিন ইউনিয়ন পরিষদে উক্ত খামারের বিপরীতে একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য গিয়ে তিনি তা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন।
বেথুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং এবিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গোপালগঞ্জ থেকে সাংবাদিকরা এলাকায় গেলে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন আরোজ আলী মেম্বার সহ তার লোকজন। শুনেছি এবিষয়ে সাংবাদিকরা রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
বেথুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অনাদী বাবু জানান, সাধুহাটী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারে জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কোন ট্রেড লাইসেন্স নেয়নি। তবে রোববার (৯ এপ্রিল) সকালে আরোজ আলী মোল্যা ট্রেড লাইসেন্স নিতে পরিষদে এসেছিলেন। চেয়ারম্যান কাশিয়ানীতে থাকায় নিতে পারেননি, পরে তিনি ফিরে যান।
কাশিয়ানী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার দাস বলেন, সাধুহাটী গ্রামের উক্ত খামারের নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত কেউ কোন আবেদন করেননি। মরা গরু অথবা অসুস্থ গরুর মাংস যেটাই হোক না কেন তা বিক্রি করে থাকলে অবশ্যই অন্যায় করা হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের দেওয়া অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী রোববার আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং আসামীদেরকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।