নির্বাচিত হলে আর্থিক লোনসহ নানা লোভনীয় অফার দিয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) ৩নং ওয়ার্ডের আশেক আলী নামে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ খোদ ভোটারদের। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন কথা বলছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আশেক আলী।
অভিযোগে জানা যায়, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ‘সমন্বিত গ্রামীণ কর্মসূচি-‘আইআরডিপি’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কাজ করছে। রংপুর সিটি নির্বাচন ঘিরে এনজিওটির মাধ্যমে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা ও একটি করে সেলাই মেশিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আশেক আলী। এমন ঘটনায় ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র নিজ জিম্মায় নিয়েছেন ওই কাউন্সিলর প্রার্থী।
ওই ওয়ার্ডের নেয়ামতপাড়ার ভোটার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় একটি গাভীসহ তিন লাখ টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আশেক আলী। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৫০০ ভোটারের কাছ থেকে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ১ হাজার করে টাকাও নিয়েছেন। নির্বাচিত হলে প্রত্যেককে একটি গাভীসহ তিন লাখ টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।
একই ওয়ার্ডের উত্তম উত্তরপাড়ার বাসিন্দা লাভলু বলেন, আমার কাছে একজন ফরম নিয়ে আসেন, আমি জানতে চাই এটা কিসের ফরম? আমাকে বলা হয় সাড়ে চার হাজার ফরমের মাধ্যমে গরু ও সেলাই মেশিন দেয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) উত্তম মাস্টারপাড়া এলাকার ভোটারদের হাতে হাতে ‘সমন্বিত গ্রামীণ কর্মসূচি-আইআরডিপি’ নামে একটি এনজিওর ফরম দেখে আমি তাদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি আশেক আলী চাচা নাকি তিন লাখ টাকা করে লোন দিবেন। ভোটের সময় এই ধরণের প্রলোভন রহস্যজনক।
এ বিষয়ে ‘সমন্বিত গ্রামীণ কর্মসূচি-আইআরডিপি’র মাঠকর্মী সাহেব আলী বলেন, আইআরডিপি’র ফরমের মাধ্যমে অফিস কি দিবে তা আমরা জানি না। তবে ফরমে লেখা আছে, গবাদী পশু-পাখি, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং সেলাই-ফোঁড়াই মেশিন এগুলো দিবে। কোন অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় নাই বা দিবেও না। এই এনজিওটার সভাপতি আশেক আলী। এর অফিস বগুড়ায়।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী আশেক আলী বলেন, এটি আইআরডিপি’র গ্রামীণ উন্নয়ণ প্রকল্প।দুই বছর ধরে এই প্রকল্পের সভাপতি আমি। সরকারি এই প্রকল্পটির মাধ্যমে চার হাজার হতদরিদ্রদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। আমার ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষকে সাবলম্বী করার জন্য আমি নিজের অর্থ খরচ করে এই প্রকল্প নিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে আমি কারো কাছে একটি টাকাও নেইনি।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তারা নির্বাচনকে ঘিরে ফায়দা খুঁজছে। আমি তো এর আগেও কাউন্সিলর ছিলাম। কিন্তু এখন আমি এই প্রকল্পের সভাপতি হওয়ায় অনেকেই ভোটারদেরকে বিভ্রান্ত করতে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।
এদিকে রংপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, নির্বাচনের নীতিমালা বা আচরণবিধি বহির্ভূত কোন কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কারো কাছ থেকে আমরা এরকম কোনো অভিযোগ পাইনি।
রসিকের ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৪৪১ জন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ওই দিন এই ওয়ার্ডের ৫টি ভোটকেন্দ্রের ৩৪ কক্ষে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। এই ওয়ার্ডে এবার নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।