আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের এইদিনে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত ন্যাশনাল জুট মিলের ভিতর কর্মকর্তা কর্মচারী ও মুক্তিযোদ্ধা সহযোগীসহ ১০৬ জন বীর বাঙ্গালীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে গণহত্যা চালায়। আর সেই থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর এলে ওই শহীদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিকেলে শহীদের গণকবরে উপজেলা প্রশাসন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত করে দোয়া কামনা করা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া জানান, ১৯৭১ সালে ১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ন্যাশনাল জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা সকালের নাস্তা খেতে বসার মুহুর্তে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে মিলের ভিতর প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। ওই দিন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ন্যাশনাল জুট মিলের নিরীহ বাঙ্গালী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হানাদার বাহিনীরা গুলি করে নির্মম গণহত্যা চালায়।
তিনি আরো জানান, পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙ্গে মিল ত্যাগ করে। ৩/৪ দিন নিরীহ বাঙ্গালীদের মৃতদেহ মিলের সুপারী বাগানে পড়ে থাকে। পাক বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মিলের ভিতরের মরদেহগুলো উদ্ধার করতে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। ফলে মরদেহগুলি শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিনত হয়। দেশ স্বাধীন হলে এলাকাবাসী মিলের ভিতর গিয়ে ১০৬ জনের মৃতদেহ বিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে বিকৃত ওই মৃতদেহ ন্যাশনাল জুট মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনকে গণকবরে সমাহিত করেন।
জানা গেছে, মিল কর্তৃপক্ষ গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’ নামক একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। শহীদের গণকবরের পাশে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর এলে ১০৬ জন শহীদের গণকবরে উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে এবং শহীদের আত্মার মাগফেরাত করে দোয়া কামনা করা হয়।