শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ ৬৭ বছর বয়সে এবার এসএসসি পাস করেছেন। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাই স্কুল থেকে চলতি ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে কৃতকার্য হন।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার লংগরপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু সে বছর তাদের বাড়িতে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে পরিবারটি। অর্থ কষ্ট সামাল দিতে তাকেও কাজে যোগ দিতে হয়। ফলে লেখাপড়া আর হয়ে ওঠে না তার। পরে কাজের খোঁজে ঢাকা চলে যান আবুল কালাম আজাদ। সেখানে রোজগার করে বাড়িতে টাকা পাঠালে পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। কাজের সন্ধানে যাওয়া কালাম বিয়েও করেন ঢাকায় থাকা অবস্থায়।
২২ বছর ঢাকায় কাটানোর পর সংসারের স্বাচ্ছন্দের জন্য ১৯৯৫ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে কাটান জীবনের আরও ১৮ বছর। দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে শুরু করেন পড়াশোনা। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হন বকশীগঞ্জ চন্দ্রাবাজ রাশিদা বেগম হাই স্কুলে। সেখানে থেকেই দিয়েছেন এবারের এসএসসি পরীক্ষা। পাশও করেন কৃতিত্বের সাথে। তিনি প্রায় ৮ হাজার গান, কবিতা, ছড়া ও উপন্যাস লিখেছেন। এসব লেখা সংরক্ষণের জন্য ১৭টি বই আকারে বাঁধাই করে রেখেছেন তিনি। আর প্রকাশ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা ‘দেশরত্ন’ নামে একটি বই।
তার বড় ছেলে সামসুদ্দিন মৌলিভীবাজারে একটি কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক, মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকুরী করেন এবং ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই তা সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি।
৬৭ বছর বয়সী কালাম জানান, ছোট ছেলে আমার এসএসসি পাসের খবরটি আমাকে জানান। এই বয়সে এসএসসি পাস করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিলো। তবুও আমি হাল ছাড়িনি, আর হাল ছাড়িনি বলেই পাশ করতে পেরেছি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অধ্যাবসায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া পরামর্শ দেন তিনি।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া জানান, কালাম চাচার এসএসসি পাসের খবর শুনে আমিসহ এলাকার সবাই ভীষণ খুশি। তিনি এই বয়সে লেখাপড়া করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সমাজের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে তাঁর এই কর্মকাণ্ডে। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।