কিশোরগঞ্জে সিত্রাং ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উপড়ে পড়েছে শহরের বটতলার মোড় খ্যাত প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন বটগাছটি। বটগাছটি উপড়ে পড়ায় এখন স্থানীয় লোকজন সহ পথচারীরাও আক্ষেপ প্রকাশ করছেন। সোমবার রাত আনুমানিক ১ টারদিকে গাছটি ধ্বসে পড়ে বলে জানায় স্থানীয়রা।
মঙলবার সকাল থেকেই উপড়ে পড়া গাছটি দেখতে বটতলা মোড়ে জনতা ভীড় করছেন। কেউ আবার বটগাছটিকে ঘীড়ে স্মৃতিচারণ করছেন। কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নিকটে ইবটতলা মোড়। ধ্বসে পড়া বটগাছটির নামেই এ মোড়কে বলা হয় বটতলার মোড়। শতবর্ষী বটগাছটিকে ঘীরে কত জনের রয়েছে কত স্মৃতি। তাই বটতলা নামটি অক্ষুণ্ন রাখতে একই জায়গায় যেনো আরেকটি বটের চারা রোপনের দাবী তুলছেন সাধারণ জনগণ।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দমকা বাতাসে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বটতলা মোড়ের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছ উপড়ে পড়েছে। এমন দৃশ্যে ওই এলাকায় মানুষের মন খারাপ। বটগাছটির এমন পরিণতির জন্য তাঁরা শুধু ঘূর্ণিঝড়কেই দায়ী করছেন না। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় গাছটির শিকড় কেটে আগেই গাছটির গোড়া দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল, ফলে ঘূর্ণিঝড় সামাল দিতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার দিবাগত রাতে উপড়ে পড়ে বটগাছটি। এ সময় গাছের নিচে কোন লোক ছিল না বিধায় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে গাছের নিচে ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ বক্স ও একটি চায়ের দোকান ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বটগাছটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এখানকার বাজার। গাছটির কারণেই এ জায়গার নামকরণ হয় ‘বটতলা মোড়’, যা এখন ‘হাসপাতাল বটতলা মোড়’ নামে পরিচিত। তাঁরা বলেন, এ গাছটি শুধু ঐতিহ্যবাহীই ছিলনা; এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শতশত পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত ছিল।
সত্তোর্ধ মতি নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘নরসুন্দা নদীর কিনারে ছায়াঘেরা এ বটগাছের নিচে বসে অনেকেই বসন্তের নির্মল বাতাস উপভোগ করেছেন। এই বটগাছকে কেন্দ্র করেই নামকরণ করা হয়েছে বটতলা মোড়।’
খোকন মিয়া, সোহেল মিয়াসহ অনেক পথচারীরা জানান, জানান, কিশোরগঞ্জ শহরের ইতিহাসের সাক্ষী এই বটগাছ। এ গাছটি হঠাৎ ভেঙে পড়ায় তাঁদের মন খারাপ। এই গাছের নিচে তাঁদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এখন বৃদ্ধকাল পার করছেন অনেকে। তারা আরো বলেন, ‘গাছটি এভাবে উপড়ে পড়বে ভাবতেও পারেননি তাঁরা। এটার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। দিনে দিনে এ গাছটির শিকড় কেটে এটাকে মেরে ফেলা হচ্ছিল। ফোয়ারা নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ বক্স তৈরি এবং বিভিন্ন দোকানপাট করাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিকড় কেটে গাছটির গোড়া দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।’
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছটি উপড়ে পড়ার পর অনেকেই গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বাধাও দিচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, গাছটি উপড়ে পড়ার সংবাদ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে।