নির্জন রাস্তা। দু'ধারে গাছ, মাঝেমধ্যে কবরস্থানও আছে। এমন রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে আসছেন কয়েকজন ছাত্রী। গতকাল শনিবার দুপুরে এ দৃশ্য মিলল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পাথরঘাটা এলাকায়। এই শিক্ষার্থীরা ফিরছেন উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বনাঞ্চলের পাশের বিরল সীমান্তবর্তী বিল্লা, রাঙ্গণ, বহবলডিঘিসহ বিভিন্ন গ্রামে। ফিরছেন বটে, তবে এগিয়ে চলেছেন লক্ষ্যের দিকে। শিক্ষক, সেবিকা, ডাক্তার, বৈমানিক- এ রকম কত কিছুই না হয়ে ওঠার স্বপ্ন তাদের!
বিরল উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এসব গ্রাম থেকে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ডহাট মহাবিদ্যালয়ের দূরত্ব ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিনই এসব এলাকার দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রী এভাবে দলবেঁধে সাইকেল চালিয়ে মহাবিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন। এভাবে যাতায়াত করে অর্থ ও সময় বাঁচান তারা। ভালো রাখেন শরীরটাকে। তা ছাড়া নির্জন রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় না কাউকে।
কিন্তু গতকাল থেকে বন্ধ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই তাদের ফিরতে হয়েছে ক্লাস না করেই। গ্রামাঞ্চলের এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই নেই স্মার্ট মোবাইল ফোন, এলাকায় নেই ডিশের লাইন। তাই তারা জানতেই পারেননি, অকস্মাৎ বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। বাড়ি থেকে কলেজ দূরে হওয়ায়, উপযুক্ত গণপরিবহনও না থাকায়, তা ছাড়া দারিদ্র্যের কারণেও বিরল উপজেলার ৮ নম্বর ধর্মপুর ও ১০ নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের এসব শিক্ষার্থীর চলাচলে ভরসা এই সাইকেল। তবে বৃষ্টি এলে কিংবা সাইকেল খারাপ হয়ে গেলে ভোগান্তির শেষ থাকে না তাদের।
ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বিল্লা এলাকার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অষ্টমী মহন্ত বলেন, বাসায় মাকে কাজে সাহায্য করতে হয়। অনেক সময় কলেজে যেতে দেরি হয়ে যায়। আবার আমাদের এই দিকে কাঁচা রাস্তা, ব্রিজও ভাঙা। স্যারদের সমস্যাটা ঠিক বোঝাতে পারি না। আমাদের এই দিকের রাস্তাটা যদি একটু মেরামত করে দিত, তাহলে আমাদের কষ্ট কমত।' বহবলডিঘি চকোরিয়াপাড়ার কলেজছাত্রী ঈশিতা রানী বলেন, অটোরিকশা বা যানবাহনে যাতায়াত করতে গেলে অনেক খরচ হয়। তাই সাইকেলেই চলাফেরা করি। যদি কোনো কারণে দেরি হয়, মা-বাবা খুব টেনশন করে। সরকার যদি আমাদের জন্য কোনো বাসের ব্যবস্থা করত, খুবই উপকার হতো।
ভান্ডারা এলাকার পূজা রানী বলেন, আমি শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা করছি। বাড়ি থেকে একা আসতে সমস্যা হয়, তাই দুই বান্ধবী মিলে কলেজে যাই। সাইকেল বিকল হলে বাসা থেকে যাতায়াত করতে ৫০-৬০ টাকা ভাড়া লাগে। রাঙ্গণ গ্রামের অনামিকা রানী বলেন, আমার স্বপ্ন সেবিকা হবো। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সাইকেলে যাতায়াত করি, কিন্তু বৃষ্টির দিনে এক হাতে ছাতা ধরে আরেক হাতে সাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালায়। তাতেও আমাদের খুব সমস্যা হয়।
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক কালুরাম সরকার বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই গরিব ঘরের। এদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নের জন্য স্থানীয় দিকগুলো বিবেচনা করে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চৌধুরীডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুলিন সরকার বলেন, বাড়ি থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরের কলেজে ওরা বলতে গেলে প্রতিদিন যাতায়াত করে। সমস্যার তোয়াক্কা করে না। সবারই উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh