× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শঙ্কা নিয়ে চলছে নোয়াখালীর দুর্গোৎসব

হাসিব আল আমিন, নোয়াখালী

০২ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৫৬ এএম

প্রতিবছর দুর্গাপূজাকে ঘিরে নোয়াখালীর চৌমুহনীসহ জেলা শহরের প্রায় সবগুলো মন্ডপ তৈরি হতো ব্যববহুল ও নান্দনিকাতার ছোঁয়ায়, থাকতো বিশেষত্ব। কিন্তু গত বছর দশমীর দিন চৌমুহনীসহ জেলায় বেশ কয়েকটি মন্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় ক্ষত রয়েছে মন্দির কমিটি ও সনাতন ধর্মালম্বীদের। তাই এ বছর অনেকটাই জৌলস হারিয়ে ম্লান এবারের দুর্গোৎসব। নেই বিগত বছরগুলোর মতো চাকচিক্য। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জেলায় ১৬৯টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ঘটপূজা হয় ৬টি মণ্ডপে। এরমধ্যে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভায় ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। চৌমুহনীর ১১টি মণ্ডপেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত হয়। এবার জেলায় নতুন করে আরো ৬টি পূজামণ্ডপ বাড়িয়ে ১৭৫টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৫টিতে ঘটপূজা পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে চৌমুহনী পৌরসভাসহ বেগমগঞ্জে ২৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালীর চৌহমুনীতে চৌমুহনী এলাকার অন্তত ১১টি পূজামণ্ডপ ও ৬টি মন্দিরে একযোগে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বেগমগঞ্জের ছয়ানীতে একটি পূজামণ্ডপ, একটি কালি মন্দির ও দুর্গাপুরে একটি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে চৌহমুনীর ওই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে দুজনের প্রাণহানিসহ লুটপাট করা হয় মন্দিরগুলোর অর্থ, ভাঙচুর করা হয় মণ্ডপগুলোর সব প্রতিমা। চৌমুহনীতে মন্দির ও পূজামণ্ডপের সেই ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত এখনো শুকায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাধিক তৎপরতার মধ্যে অতীতের সব শঙ্কাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জেলায় বাড়ানো হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপ।

চৌমুহনীর বাসিন্দা তমা বনিক বলেন, গত বছর দুর্গাপূজায় হামলা হয়েছিলো। আমরা তাতে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। এবার যেনো প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে আমরা ঠিকমতো পূজায় অংশগ্রহণ করতে পারবো। 

গতবছর হিন্দুদের মন্দির, আশ্রম, পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এবার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে সাথে রয়েছে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।

চৌমুহনী পূজোপকরণের স্বত্বাধিকারী শুভ্রত রায় বলেন, গতবার যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবার তেমন সম্ভাবনা দেখছিনা। তবে দেশের অন্য কোথাও হলে আমাদের শঙ্কা বেড়ে যাবে। আমি এবার দুইটা দোকান নিয়েছি। আশাকরি এবার ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঔক্য পরিষদের নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট পাপ্পু সাহা বলেন, আমরা বলি দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিন্তু দুর্গোৎসব সবার। গতবছর সে বিষাদময় শারদ আমরা দেখেছি এবার তা দেখতে চাইনা। এনিয়ে আমরা ভারাক্রান্ত এবং আমাদের মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের যথেষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন তবুও আমাদের বর্ণাঢ্য আয়োজন নেই। শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার জন্য আমাদের পূজা টা হচ্ছে।

বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ বেগমগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব জয় ভূঁঞা  বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মাথায় রেখে আমরা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। প্রতিমা আসার সাথে সাথে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক থাকে। আমরা নিজেরাও পরিদর্শন করি। এই নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আমাদের পূজাটা আমরা করতে পারবো বলে আশাকরছি।

চৌমুহনী রাধামাধব জিউর মন্দিরের পূজার আয়োজক বাপ্পা রায় চৌধুরী  বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ডুবে গেছে। আমাদেরকে সেই সম্প্রীতি পুনঃউদ্ধার করতে হবে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের যৌথ প্রয়াসে সম্প্রীতি উত্তোরনে কাজ করতে হবে। তাহলে সোনার বাংলার আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গানের মতো বাংলাদেশ পাবো।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি বিনয় কিশোর রায় বলেন, গতবার দুর্গাপূজার উৎসবে চৌমুহনীতে মন্দির ও মণ্ডপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে ক্ষত রয়ে গেছে। তাই গতবারের তুলনায় এবার পূজার প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে আমরা মনোবল হারাইনি। পূজার প্রস্তুতি স্বল্প পরিসরে হলেও এবার জেলায় আরো ৬টি পূজা মণ্ডপ বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের দিক থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। শঙ্কা থাকলেও মায়ের অর্চনাতে কোনো কমতি থাকবে না।

বিনয় কিশোর রায় আরো বলেন, চৌমুহনীতে মন্দির ও মণ্ডপে গতবার হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মোট ১৮টি মামলা হয়েছে। দায়ের করা মামলার মধ্যে ১০টি মামলার বাদী পুলিশ। বাকি ৬টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপ পূজা কমিটির সদস্য, ১টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরের মালিক ও ১ জন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ। এখন পর্যন্ত কোনো মামলাই নিষ্পত্তি হয়নি। সব মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শক্তি নয় আমরা বুদ্ধি দিয়ে কাজ করছি। জেলার মোট ১৮০ টি পূজামন্ডপে জেলা পুলিশের পক্ষ হতে প্রতিটি পূজামন্ডপে এবং মন্ডপকেন্দ্রিক মোবাইল টিম সহ থানা ভিত্তিক স্ট্রাইকিং মোবাইল রাখা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট ৭৫৩ জন সদস্য মাঠে কাজ করছেন। 

মো. শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, এর মধ্যে নিয়মিত পোষাকি পুলিশের পাশাপাশি এসবি ও ডিবির টিমও রয়েছে।এছাড়া ৩০ জন আরআরএফ এবং ৩০ জন এপিবিএন সমন্বয়ে স্পেশাল স্ট্রাইকিং টিমও রাখা হয়েছে।সর্বমোট ৮১৩ জন পুলিশ সদস্যের সাথে পূজামন্ডপ ভিত্তিক (নারী ও পুরুষ মিলিয়ে) মোট ১০৮০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন আছেন। এছাড়াও র‍্যাবব ও বিজিবিও তাদের  নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে তৎপর আছেন। সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.