গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের ভাই মো. হোসেন আলীর (৪৫) বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ উঠেছে।
মো. হোসেন আলী ওই ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের আপন জ্যাঠাতো ভাই। চুরি যাওয়া গরু ৩টি উদ্ধার করে মালিককে ফিরত দিলেও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি চেয়ারম্যান ।
এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ওই এলাকায় যাদের গরু হারিয়েছে ইতোপূর্বে। তাঁদের ধারণা মো. হোসেন আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পূর্বের চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে।
গরুর মালিক গাজী রহমানের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার ভাইয়ের তিনটি গরু চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। গরু চুরির পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। একদিন পর জানতে পারি চেয়ারম্যানের ভাই হোসেন আলী গরু ৩টি চুরি করেছেন। তখন এলাকার কয়েকজনসহ চেয়ারম্যানের দারস্থ হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখতেছি। পরে রাতের বেলা আমাদের ডেকে গরু তিনটি তিনি ফিরত দিয়ে বলেন আপনারা বাড়িতে চলে যান। মনে করেন বিষয়টি আমার। পরে চেয়ারম্যানের এমন কথা শুনে আমরা গরু ৩টি নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
তবে এ বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার কে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গরু চুরির ঘটনা এটি প্রথম নয় তাঁদের এলাকায়। এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে। অভিযোগ দেয়া আছে থানায়। চোরাই গরু উদ্ধার তো দুরের কথা আসামিই শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এবার আমরা চোর ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যানের ভাই হওয়ায় কিছু করতে পারলাম না। চেয়ারম্যান তাঁর ভাইয়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে। এলাকাবাসির ধারণা মো. হোসেন আলীকে চাপ দিলে পূর্বের হারানো গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেতো।
কথা হয় ওই ইউনিয়নের নগর কাঠগড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান মতির (৬২) সাথে। তিনি বলেন,‘প্রায় মাস দুয়েক আগে তার তিনটি ফ্রিজিয়ান গরু চুরি হয়। প্রত্যেক গরু দৈনিক ১৫/২০ কেজি করে দুধ দিতো। যার আনুমানিক দাম প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। থানায় অভিযোগও দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। তাঁর গরু চুরির ঘটনায় হোসেন আলীর হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি। মতি বলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাকি চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেতো।কিন্তু চেয়ারম্যান সেটি করতে দিলো না আমাদের।
অন্যদিকে মনমথ গ্রামের নিতেন বলেন,‘আমার বড় দাদা বীরেনের ৭টি গরু হারায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। পরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। কোন কাজ হয়নি। তারও ধারণা এ চুরির সাথে তাঁদের চুরির সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সেটি প্রমাণ করা হলো না। সে কারণে কমবে না বরং চুরি আরও বাড়বে।’
এ বিষয়ে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. শমেস উদ্দিন বাবু বলেন, 'চেয়ারম্যান চুরির সাথে জড়িত আছেন কিনা সে বিষয় আমি ক্লিয়ার না। তবে তাঁর ভাইকে এ ভাবে রক্ষা করাটা তাঁর ঠিক হয়নি। কারণ তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। সবাইকে সমান চোখে দেখা দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। গরু চোরের বিচার যদি শক্ত হতো তাহলে আগের চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেতো বলেও জানান এ আওয়ামীলীগ নেতা।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন,‘বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযােগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিন খলিফার ছেলে গাজী রহমানের (৫৫) গোয়াল ঘর থেকে গত মঙ্গলবার রাতে দেশী জাতের তিনটি গরু চুরি হয়। দিনভর খোঁজাখুঁজি করার পর গরু তিনটির সন্ধান মিলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের জ্যাঠাতো ভাই হোসেন আলীর গোয়াল ঘরে। পরে প্রভাবশালী ওই ইউপি চেয়ারম্যানের দারস্থ হন গরুর মালিক। চোরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে পরের রাতে গরু মালিককে তাঁদের গরু ৩টি ফিরত দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার।