কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়ছে বরিশালের কামার পট্টিতে। একদিকে হাপরে আগুনের শিখা অন্যদিকে হাতুরির টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে কামার পট্টিগুলো। তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম, সবখানেই কামারদের এই ব্যস্ততা লক্ষনীয়। স্থায়ী কামারের দোকানের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন হাট-বাজারে বসেছে অস্থায়ী দা, বটি, ছুরি ও চাপাতির দোকানও।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সকালে নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, টুলে বসে আগুনে পোড়া লোহা পেটাচ্ছেন কারিগররা। আর দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি, কুড়ালসহ প্রয়োজনীয় সব অস্ত্র। লোকজন কোরবানির পশু কাঁটার জন্য দা, ছুরি ও বটিতে শান দেওয়ার জন্য কামারদের কাছে আসছেন। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ নতুন করেই তৈরি করে নিচ্ছেন দা, ছুরি ও বটি। যার ফলে রাত-বিরাত বেড়েই চলছে কামারদের ব্যস্ততা।
কামার পট্টিতে আসা খোকন আহম্মেদ হীরা বলেন, প্রতি বছরই কোরবানি দিচ্ছি। আগের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো শান দিতে এসেছি। অন্য সময়ের থেকে বর্তমানে কামাররা দাম একটু বেশি নিচ্ছেন। তবুও আমরা মেনে নিচ্ছি।
পোর্ট রোড এলাকার কামার পট্টির সুনীল রায় সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, বংশপরম্পরায় আমার কামার পেশার সাথে জড়িত। বছরের বেশির ভাগ সময়ই আমাদের অলস সময় কাটাতে হয়। পুরো বছরের মধ্যে কেবল কোরবানি ঈদেই একটু ভালো কাজ হয়। তবে এবছর করোনার কারণে এখনও তেমন কাজ হচ্ছে না। যা হয় তাতে পুষিয়ে উঠা যায় না। নতুন জিনিস খুব কম লোকই কিনছেন। সবাই পুরাতন দা, ছুরি ও বটি শান দিয়ে নিচ্ছেন। আশা করছি আরও কয়েকদিন পর পুরোদমে কাজ করতে পারবো।
বরিশাল শহরের চাঁদমারী এলাকার কামার সঞ্জিব কর্মকার বলেন, সারাবছর আমাদের প্রায় বসেই দিন কাটাতে হয়। তার মধ্যে গত দুইটি বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে কাজ ছিলো না বলেই বলা যায়। তবে এবছর করোনা একটু কম থাকায় কাজের চাপ অনেকটা বেশি।
তিনি আরো জানান, সারাবছর অন্য কাজ করেই সংসার চালাই। আগের মতো কামারের কাজ এখন হয় না। কোরবানির ঈদ আসলে কামারের চাহিদা দ্বিগুণ বাড়ে তখন এ কাজ করি। ঈদ চলে গেলে আবার অন্য পেশায় চলে যাই। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া বাজারের কামার গোপাল দাস বলেন, এলাকার অনেক মানুষ এসে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি কিনে নিচ্ছেন। ঈদের আর বেশি সময় বাকি নেই, তাই আমাদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে বহুগুণ।
বরিশাল কর্মকার সমিতি’র সভাপতি কর্মকার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি’র বিকাশ ঘটায় গ্রাম বাংলার কামার শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানাই। না হলে তরুন প্রজন্ম একদিন কামার শিল্প কি তা চিনবে না।