গত দেড় দশকে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। সবচেয়ে বেশি লুটপাটের শিকার হয়েছে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক। যে কারণে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়াহভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি। এসব ব্যাংকের সম্মিলিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ২৩ শতাংশের বেশি। সংকটে থাকা এসব ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙেও সুফল মেলেনি খুব একটা। টাকা ছাপিয়ে দেয়ার পরও গ্রাহকের আস্থা ফেরেনি। সমাধান হিসেবে একীভূত করে দু’টিতে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় গভর্নর। এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সুফল নিয়ে সন্দেহ আছে বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, জোর করে একীভূত করা ঠিক নয়। এতে ভালো ফল মিলবে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, একীভূতকরণের পক্ষে আমিও। কিন্তু একটির কার্যক্রম আরেকটির সঙ্গে এক হয়ে যাবে। সুতরাং এগুলো জোর করে করানো ঠিক না। সফলতার প্রতাশ্যা রাখি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারবে কি না সন্দেহ আছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বললেন, ফরেনসিক অডিট, ড্যামেজ নিরুপণ ও ভ্যালুয়েশনটা হয় নাই। ব্রিজ ব্যাংকের আওতায় তাদের ফেলা হবে কি না, এই ধাপগুলো বাকি আছে। দুটো বড় ব্যাংক হলে হলে ক্ষতির কিছু নাই। এটা আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বড় দুইটা ন্যারেটিভ যোগ করলে এটা বড় নেগেটিভ হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকটে থাকা শরীয়াহভিক্তিক ব্যাংকের বেশ কয়েকটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন। এসব ব্যাংক একীভূত করে খাতভিত্তিক বিশেষায়িত ব্যাংককে রূপান্তর করা যেতে পারে বলে মনে করেন কেউ। আবার বিপরীত মতও রয়েছে। মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, খাতভিত্তিক যেমন টেক্সটাইল খাতের জন্য একটা ব্যাংক দেয়া যেতে পারে। এসএমই এর জন্য একটা ভিন্ন ব্যাংকও করা যেতে পারে বা যেকোনো ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এই ধরনের স্পেসিফিক দায়িত্ব দিয়ে যেমন কৃষি ব্যাংক একটা উদ্দেশ্যে হয়েছে। চিন্তা করলে সামগ্রিকভাবে আমি এটাকে খারাপ মনে করি না। ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশেষায়িত ব্যাংকিংয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো না। ব্যাংকিংয়ে একটু-দুইটা কার্যক্রম করে কার্যকর হবে না। এ রকম কথাবার্তা আমরা আগেও শুনেছি। ব্র্যাক ব্যাংক তো এসএমই ব্যাংকিং দিয়ে শুরু করেছিল। তাই একটা-দুইটা কার্যক্রম করে ব্যাংক কার্যকর হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সংকট সমাধানে টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট। সেখানেই একীভূতকরণের বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, কিছু ব্যাংক হয়তো একীভূত হবে। কিছু ব্যাংক অধিগ্রহণ হবে। আসলে কী হবে বা হলে কোন প্রক্রিয়ায় হবে তার বিস্তারিত এই ব্যাংক রেজ্যুলেশনে থাকবে। একীভূতকরণ যতটা জটিল, তারচেয়ে একটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতিমালা তৈরি করা আরও বেশি কঠিন। সেই কঠিন কাজটা যখন হয়ে যাবে পরবর্তী ধাপটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এদিকে, ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পেতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh