নাদেরা বেগম মহান ভাষা আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশে মুসলিম নারীদের বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ।
বড় ভাই কবীর চৌধুরী এবং মেজো ভাই মুনীর চৌধুরী, দু’জনই বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেও বড় ভাইদের সহায়তায় পড়াশুনা শেষ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ করার সময় জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। মুনীর চৌধুরী’র অনুপ্রেরণায় কমিউনিস্ট ছাত্রী সংস্থা গঠনের কাজ শুরু করেন তিনি।
১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন সরকারের নির্দেশে ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বহিস্কার করে। যাদের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হিসেবে নাদেরা বেগমের নাম ছিলো। পুলিশ তার নামে হুলিয়া জারি করলে আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় তিনি পালিয়ে পিকেটিং-মিটিং-মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হলে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ঢাকা আর রংপুর জেলে দুই বছর কারাভোগ করেন তিনি।
তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নের অন্যতম সংগঠক। ১৯৪৮ সালের ১৬ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সভায় পুলিশি অ্যাকশনে তিনি আহত হন। পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে আরবি, রোমান ইত্যাদি বিভিন্ন হরফে লেখার সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে তার প্রচেষ্টায় কামরুন্নেসা স্কুল, বাংলাবাজার স্কুল, ইডেন মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিনি নারীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। পরবর্তীতে এসব নারীরা ভাষা আন্দলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য ভাষা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণায় সেগুলো উঠে আসে। ভাষাসৈনিক ড. হালিমা খাতুন বলেন, ‘নাদেরা বেগম তখন আন্দোলনের কিংবদন্তী নায়িকা। অনেকবার জেল খেটেছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে আমি নাদেরা বেগমের কাছ থেকে চিঠি লিখিয়ে আনি। মেয়েরা পরদিন সকালে আমতলার সভায় অংশগ্রহণ করেন। তার চিঠির ভাষা ছিল এমন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটাকে প্রতিহত করার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাও।’