জোবেদা খানম চৌধুরী বা জোবেদা রহিম চৌধুরী মহান ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানীদের একজন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুর দিকেই সিলেট জেলার নারীদের পক্ষ থেকে যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত এবং পরে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এখানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ স্মারকলিপি পাঠানোর পর থেকে বিভিন্ন ভাবে তাদের উপর চাপ আসতে থাকে। এ সময় সিলেটে উর্দু সমর্থক পত্রিকা ইস্টার্ণ হেরাল্ড তাদের সম্পাদকীয়তে নেত্রী জোবেদা খানম চৌধুরী ও স্মারকলিপি সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য প্রকাশ করে। এই অশোভন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন আরেক মহান ভাষা সংগ্রামী সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন।
সাপ্তাহিক নওবেলালের ১২ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বলেন, ‘যাহারা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী হইয়া মাতৃভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে তাহারা মাতৃভাষার বিশ্বাসঘাতক কু-পুত্রতুল্য। উর্দু ভাষাভিজ্ঞ অপেক্ষা সিলেটের উর্দু অনভিজ্ঞ মুসলমানেরা ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পালনে কোন অংশে হীন? বরং এ বিষয়ে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে সিলেটের মুসলমানদের তাহজীব ও তমদ্দুন এক বিশিষ্ট স্থান লাভের অধিকারী বলিয়া অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মত প্রকাশ করিয়াছেন।’
তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম জোবেদা খানম চৌধুরীসহ নারী নেত্রীদের এই অনন্য সাহসী ভূমিকার জন্য চিঠি লিখে অভিনন্দন জানান। তিনি লেখেন, ‘আজ সত্যিই আমরা অভূতপূর্ব আনন্দ এবং অশেষ গৌরব অনুভব করছি। সিলেটের পুরুষরা যা পারেনি তা আপনারা করেছেন। উর্দুর সমর্থনে সিলেটের কোন কোন পত্রিকা যে জঘন্য প্রচার করছে আর সিলেটের কোন কোন পুরুষ স্মারকলিপি দিয়ে যে কলঙ্কজনক অভিনয় করেছেন তা সত্যিই বেদনাদায়ক। কিন্তু আপনাদের প্রচেষ্টা দেখে মনে হ”েছ আমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। তমদ্দুন মজলিশ আজ আপনাদের অকৃত্রিম ধন্যবাদ জানাচ্ছে।’
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ও ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঙালিরা। এসময় জোবেদা খানমের নেতৃত্বে জিন্নাহ’র কাছে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তারবার্তা পাঠানো হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের নির্মম আক্রোশের প্রতিবাদে ২২ শে ফেব্রুয়ারি সিলেটে বহু নারী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। জোবেদা খানম সিলেট আঞ্চলিক সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
তার পুত্র আহমদ কবির চৌধুরীও একজন ভাষা সংগ্রামী ছিলেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষন শুরু করলে আহমদ কবির চৌধুরী মারাত্মক আহত হন।
কেবল ভাষা অন্দোলন নয়, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে ঢাকাতে মহিলাদের মিছিল বের হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh